করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ করার প্রস্তাব: সিপিডির

ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে বাজার নিয়ন্ত্রণ, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য টিসিবির সাশ্রয়ীমূল্যের পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে বাজারে মূল্যস্ফিতি বাস্তবসম্মত রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।

সিপিডি বলছে, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে আয়ের পুনর্বণ্টন ও করোনা মহামারিতে সৃষ্ট সম্পদের অসামঞ্জস্যতা নিরসন ও মানুষের হাতে অর্থ এবং খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখাই এবারের বাজেটের মূলদর্শন হওয়া উচিত। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতি, সমাজ এবং পরিবেশকে মাথায় রেখে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির সিপিডি সেন্টারে বাজেটকে কেন্দ্র করে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা। সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ড. ফাহমিদা খাতুন এবং গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম এ অনুষ্ঠানে আগামী বাজেট নিয়ে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন।

ফাহমিদা খাতুন পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে করের হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ ও নন-পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে করের হার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করারও প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, ‘কৃষিখাতে ভর্তুকির হারে কৃষি ঋণের সুপারিশ করছি। এছাড়া সারে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। যাতে কৃষকদের চাপ কিছুটা কমে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে একটা সময় এ ভর্তুকি তুলে দিতে হবে। কিন্তু সংকটকালীন সময়ে কিছু কিছু খাতে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের ভর্তুকি কৃষকরা সঠিকভাবে পাচ্ছেন কি না, সেটা সঠিকভাবে মনিটরিং করা প্রয়োজন। পাশাপাশি আগামী বাজেটে খাদ্যে, রপ্তানিশিল্পে প্রণোদনা দেওয়া এবং শ্রমিকদের হেলথ ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা, প্রাকৃতিক গ্যাসের আমদানিপর্যায়ে শুল্ক তুলে দেওয়া প্রয়োজন।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অত্যন্ত বেশি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর ভূমিকার পাশপাশি মানুষ যেন কমমূল্যে পণ্য কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের প্রয়োজন, তাদের চিহ্নিত করে খাদ্যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা শক্তিশালী করতে হবে। একটা ডাটাবেজ তৈরি করা প্রয়োজন, যেখান থেকে সঠিক তথ্যটা পাওয়া যাবে। মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে।

এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তায় যেসব ভাতা দেওয়া হচ্ছে, তা মূল্যস্ফিতির তুলনায় অত্যন্ত কম বলে উল্লেখ করেন তিনি। এজন্য ভাতার পরিমাণ অন্তত এক হাজার টাকা করা ও ২০ লাখ লোককে এর আওতায় আনার পরামর্শ দেন ফাহমিদা খাতুন।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কর আহরণ বাড়াতে যে সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেগুলো তো আমরা নিতে পারছি না। ফিসক্যাল ডেফিসিট বাড়লে অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। এ বছরের জন্য এটা মেনে নিতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় না। তবে শ্রীলঙ্কার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের অবস্থা ভালো। তবে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি একদিনে হয়নি। আমাদের বাজারভিত্তিতে ঋণ আনতে হবে। নতুন নেওয়া ঋণগুলো কোন সময়ে পরিশোধ করতে হবে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য ঠিক করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রকল্পগুলোকে সাশ্রয়ী সময়ের মধ্যে শেষ করার টার্গেট রাখাতে হবে।’

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার যেন কর খেলাপি ও ঋণ খেলাপিদের কোনোভাবে উৎসাহিত করা উচিত হবে না। আর্থিকখাত সংস্কারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে আর্থিক ও করখাতে মধ্যমেয়াদি সংস্কার করতে সরকারকে নীতিগত অবস্থান নেওয়ার কথাও এবারের বাজেট বক্তৃতায় আমরা শুনতে চাই।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি ঋণের কিস্তি দেওয়া স্থগিত করলো শ্রীলঙ্কা