চাঙা হয়ে উঠছে শেয়ারবাজার

ডিএসইর লেনদেন ৯০০ কোটি টাকার কাছাকাছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে ঈদকে সামনে রেখে চাঙা হয়ে উঠছে। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এই নিয়ে টানা চার কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার। এদিন ডিএসইতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার কাছা কাছি হয়েছে। এদিন শেয়ারবারকে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরতে ব্যাংক ও বীমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঈদের আগে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হওয়া বাজারের জন্য ইতিবাচক । সামনে ঈদ, বাজার ভালো থাকলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আনন্দ থাকে। ঈদ ভালো ভাবে করতে পারবে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর আগে টানা দরপতন দেখা দিলে তারল্য বাড়ানো এবং দরপতন ঠেকানোর লক্ষ্যে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড বা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে একশ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে গত সপ্তাহে এই বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়। শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে গত ৮ মার্চ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে সিএমএসএফ’র একশ কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করেছে আইসিবি। আইসিবির একশ কোটি টাকার বিনিয়োগের পরও শেয়ারবাজারে দরপতন চলতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে মনিটরিং জোরদার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। অস্বাভাবিক শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ানোর অভিযোগে একাধিক ব্রোকারেজ হাউজের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। সেই সঙ্গে নয়টি ব্রোকারেজ হাউজের ১৫ জন ট্রেডারকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে শেষ তিন কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে বাজার। তবে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে গিয়ে কিছুটা জটিলতায় পড়ে আইসিবি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, আইসিবি এককভাবে কোনো কোম্পানির শেয়ারে ৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ কাতে পারে না। যে কারণে বিনিয়োগের এই বাধা দূর করার জন্য বিএসইসির কাছে দাবি জানায় আইসিবি। আইসিবির আবেদন গ্রহণ করে গত বৃহস্পতিবার মৌলভিত্তির ৩০ কোম্পানিতে বিনিয়োগ সীমা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ ডিএসই-৩০ সূচকে থাকা ৩০ কোম্পানিতে এখন থেকে আইসিবি যে কোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়ার পর রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টা। এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে প্রথম দুই ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেওয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠান পতনের তালিকায় যোগ হতে থাকে। ফলে নিচের দিকে নামতে থাকে সূচক। অবশ্য বাজারের এ পরিস্থিতিতেও দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে বেশিরভাগ ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি। ফলে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪২টির। আর ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অন্যদিকে তালিকাভুক্ত ৩৩টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭টির। বাকি ৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর বিমা খাতের ৫৩টি কোম্পানির মধ্যে ৪৩টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯টির এবং একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৮৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চার দিনের টানা উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো ২০০ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৮৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৯৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭৫৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৪১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হল।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ৫৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৩ কোটি ৫৮ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ফরচুন সুজ, জেএমআই হাসপাতাল, বিডিকম অনলাইন, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ডরিন পাওয়ার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৮টির এবং ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোনালী ব্যাংকের এর দায়- সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
পরবর্তী নিবন্ধরপ্তানি বিলে বিমা করার নির্দেশনা