জমজমাট বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, ব্র্যান্ডে নজর ক্রেতাদের

নিজস্বপ্রতিবেদক : ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে ঈদের কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে উঠেছে দেশের অভিজাত শপিং সেন্টার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স। উৎসবকে ঘিরে পছন্দের পণ্য কিনতে প্রতিদিন মার্কেটটিতে ছুটে আসছেন হাজার হাজার ক্রেতা। তাদের বেশিরভাগই কিনছেন ব্র্যান্ডের পণ্য। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। ১৫ রোজার পর ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে পোশাক কেনা ক্রেতাদের সিংহভাগই রুচিশীল। বেশিরভাগ ক্রেতা দামের থেকে পণ্যের মানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। তাদের পছন্দ ও রুচির ওপর গুরুত্ব দিয়েই এখানকার ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে দেখা গেছে, ক্রেতা-দর্শনার্থীতে মার্কেটটি ভরপুর। মার্কেটের ভেতরে যেমন ক্রেতাদের ভিড়, তেমনি বাইরেও ক্রেতাদের জটলা চোখে পড়ে।

ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে প্রতিটি স্টলের বিক্রয়কর্মীদের হিমশিম খেত হচ্ছে। বিশেষ করে আড়ং, ইয়েলো, রিচম্যান, ইনফিনিটি, ইজি, দর্জিবাড়ি, প্লাস পয়েন্টসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্টলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।

ক্রেতারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে গত দুই বছরের ঈদ সেভাবে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ফলে এবার সবাই জমজমাটভাবে ঈদ উদযাপন করতে চান। ঈদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে তুলতেই নতুন পোশাক কিনছেন সবাই।

মার্কেটের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি বেশ ভালো। রোজার শুরু থেকেই ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন এবং পছন্দের পোশাক কিনছেন। দিন যত যাচ্ছে, ক্রেতাদের ভিড় তত বাড়ছে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকছে।

তারা আরও জানিয়েছেন, ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি শুরু হয়ে গেলেও মূল বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। ঈদের মূল বিক্রি শুরু হবে ১৫ রোজার পর। তখন শুক্র-শনিবার বলে কিছু থাকবে না। প্রতিদিনই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় থাকবে।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে আড়ংয়ের শো-রুমে ঢুকতেই দেখা যায় ক্রেতা-দর্শনার্থীতে তিল ধরানোর জায়গা নেই। শো-রুমটির ভেতরে প্রবেশ করে সামনে এগোতে বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে দম ফেলার ফুসরত নেই বিক্রয়কর্মীদের।

শো-রুমটির একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘আমাদের এই শো-রুমে প্রতিদিনই ক্রেতাদের এমন ভিড় থাকে। বৃহস্পতিবার ক্রেতাদের ভিড় আরও বেশি ছিল। আজ এখন যে ভিড় দেখছেন, ইফতারের পরও আরও কয়েকগুণ বেশি হবে। ক্রেতাদের এ ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইফতারের সময়টুকু ছাড়া এক সেকেন্ডও বিশ্রাম নিতে পারছি না।’

শো-রুমে কেনাকাটা করতে একজন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আড়ং থেকে পোশাক কিনি। এখানে পণ্য কিনতে দরদাম করা লাগে না। আবার একটা পোশাক কেনার পর পছন্দ না হলে পরবর্তীতে পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। ঝামেলামুক্ত কেনাকাটা করা যায়। দামও নাগালের মধ্যে।’

তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরের ঈদেও পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কিনেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে কেনাকাটার যে আনন্দ, তা ছিল না। ঘরবন্দি ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে। এবার সেই পরিস্থিতি নেই। এবারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সবাই মিলে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় ইয়েলো, রিচম্যান, প্লাস পয়েন্ট, ইজির শো-রুমেও। ইয়েলো থেকে পাঞ্জাবি কেনা আরিয়ান বলেন, ‘গত বছর আমার এক বন্ধু ইয়েলোর পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছিলেন। ওই পাঞ্জাবিটা আমার খুব পছন্দ। তাই এবার ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে ইয়েলোতে এসেছি। নিজের জন্য একটি এবং বন্ধুর জন্য একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। এ পাঞ্জাবির দাম একটু বেশি, তবে মান অনেক ভালো। পরেও অনেক আরাম।’

রিচম্যান থেকে শার্ট কিনতে আসা মো. ফরিদ বলেন, ‘কয়েক ব্র্যান্ডের শো-রুম ঘুরে এখান থেকে একটি শার্ট কিনলাম। বেশ পছন্দ হয়েছে, দামও বাজেটের মধ্যে। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে আরেকবার মার্কেটে আসবো। তখন কিছু কেনাকাটা করবো।’

তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় ব্র্যান্ডের পোশাক কিনি। ব্র্যান্ডের শো-রুম থেকে কিনলে দরদাম করার কোনো ঝামেলা নেই। নন-ব্র্যান্ডে গেলে এক হাজার টাকার পণ্যের দাম চায় পাঁচ হাজার টাকা। বিক্রেতাদের ব্যবহারও ভালো না। তাই হ্যাসেলমুক্ত কেনাকাটার জন্য ব্র্যান্ডের পণ্য কেনায় নিরাপদ।’

রিচম্যানের বিক্রয়কর্মী মো. আবু কাওসার বলেন, ‘এবার ঈদকেন্দ্রিক খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রথম রোজা থেকেই ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন। দিন যত যাচ্ছে, ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ১৫ রোজার পর ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে।’

প্লাস পয়েন্টের বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর মানুষ ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। দুই বছর পর এবার মানুষ স্বাধীনভাবে কেনাকাটা করতে পারছেন। ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে প্রতিদিন ক্রেতারা মার্কেটে ছুটে আসছেন। এবার ঈদকেন্দ্রিক খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে এনআরবিসি ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধফেব্রুয়ারি মাসে ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি