নিজস্ব প্রতিবেদক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, সার ও খাদ্যের দামে সর্বোচ্চ ধাক্কা লেগেছে। কারণ সংকটময় এ অঞ্চলে খাদ্য বিশেষ করে গম উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে বিশেষ একটা জায়গা দখল করে আছে। অন্যদিকে জ্বালানি উত্তোলনেও পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তারকারী দেশ রাশিয়া। এ অঞ্চলে প্রচুর গ্যাস উৎপাদন হয় ফলে বিশ্বব্যাপী ইউরিয়ার চাহিদাও পূরণ হয়। ফলে চলমান সংকটের কারণে খাদ্য, সার ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ধাক্কা বিশ্ববাসীকে আগামী তিন বছর বয়ে বেড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) মধ্যরাতে ওয়াশিংটন থেকে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক অর্থনীতি ১৯৭০-এর দশকের মতো উচ্চমুদ্রাস্ফীতি ও দুর্বল প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হওয়ার ভীতি জোরালো হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারগুলোতে পণ্য পৌঁছাতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কার সম্মুখীন হচ্ছে দাবি করে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পরিচালক আয়হান কোস বলেন, খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে একটি উল্লেখযোগ্য মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এটি সম্ভবত দারিদ্র্য কমানোর অগ্রগতিকে স্থবির করবে। উচ্চদ্রব্যমূল্য ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধিক দামের প্রবণতা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ চলতে পারে। আর এর সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতিও অব্যাহত থাকতে পারে। ব্যাংকটির সবশেষ পণ্যবাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগত দুই বছর ধরে ১৯৭৩ সালের তেল সংকটের পর জ্বালানির মূল্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। আর একই সময়ে খাবার ও সারের দাম বেড়েছে ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে বেশি। খাবার ও জ্বালানির দাম বর্তমান পর্যায় থেকে কমতে শুরু করলেও বিশ্বব্যাংকের ধারণা, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এগুলোর গড়মূল্য বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় বেশি থাকবে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে বাণিজ্য ও উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় এ বছর জ্বালানির দাম ৫০ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। তারা বলছে, অপরিশোধিত জ্বালানির গড়দাম ২০২২ সালে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে দাঁড়াবে। ২০১৩ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ এবং ২০২১ সালের তুলনায় এই দাম ৪০ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালে এই দাম ৯২ ডলারে নামতে পারে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরের এর গড়দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার। অর্থাৎ ২০২৩ সালে দাম কমলেও তা হবে গত পাঁচ বছরের দামের চেয়ে ঢের বেশি।
ইউরোপের বাজারে গ্যাসের দাম ২০২২ সালের দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর কয়লার দাম বাড়বে ৮০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ধারণা, এ বছর গমের দাম বাড়বে ৪০ শতাংশের বেশি। এতে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানির ওপর নির্ভরশীল উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের সিনিয়র ইকোনমিস্ট জন ব্যাফেস বলেছেন, পণ্যের বাজার প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে, কিছু পণ্যের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে জ্বালানি ও সারের মূল্য তীব্র বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস করতে পারে। কমমূল্যের সার ব্যবহার খাদ্য উৎপাদন ও গুণমানকে প্রভাবিত করবে, যা খাদ্যের প্রাপ্যতা, গ্রামীণ আয় ও দরিদ্রদের জীবিকাকে প্রভাবিত করবে।