নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার টানা দর পতনের সঙ্গে লেনদেনের খরা দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। যা ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। গতকাল ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা এক বছর ১২ দিন বা ২৪৯ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল ২৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। লেনদেন খরার বাজারে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বড় পতন হয়েছে মূল্যসূচকের। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়ানো এবং দরপতন ঠেকানোর লক্ষ্যে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল’ থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে গত সপ্তাহে এই বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে গত ৮ মার্চ ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ থেকে ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই নির্দেশের প্রেক্ষিতে সিএমএসএফ’র ১০০ কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হলেও তার সুফল মেলেনি শেয়ারবাজারে। বরং টানা দরপতনের মধ্যেই রয়েছে শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই পতন দিয়ে পার করে শেয়ারবাজার। এ পরিস্থিতিতে গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের ২০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকেনি। বরং লেনদেনের শেষদিকে এসে দরপতন হতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বোচ্চ দাম কমিয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে লেনদেনের শেষদিকে এসে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও তারা ক্রেতা খুঁজে পাননি। প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা না থাকায় লেনদেন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। গতকাল ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে মাত্র ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮০টির। আর ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫২৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৫৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪১ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপারের ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্যালভো কেমিক্যাল।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ফার্মা এইড, জিএসপি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইয়াকিন পলিমার। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৩টির এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।