দরপতন থেকে বেরিয়ে উত্থানের ধারায় শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসও ব্যাপক সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। পাশাপাশি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৭০০ কোটি টাকা উপরে হয়েছে। এবিষ বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজি ফেরাতে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রকৌশল, বস্ত্র, বিমা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।


এদিকে এর আগে টানা দরপতন দেখা দিলে তারল্য বাড়ানো এবং দরপতন ঠেকানোর লক্ষ্যে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে একশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে গত সপ্তাহে এ বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়।


শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে গত ৮ মার্চ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।


নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিএমএসএফের একশো কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হলেও গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই পতন দিয়ে পার করে শেয়ারবাজার। এমনকি চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসেও দরপতন হয়।


এ পরিস্থিতিতে বাজারে মনিটরিং জোরদার করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। অস্বাভাবিক শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ানোর অভিযোগে একাধিক বোকারেজ হাউজের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। সেইসঙ্গে নয়টি ব্রোকারেজ হাউজের ১৫ জন ট্রেডারকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পতন থেকে বেরিয়ে মঙ্গলবার শেয়ারবাজরে বড় উত্থান হয়। বুধবারও দেখা মিলে সূচকের বড় উত্থান। গতকাল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষপর্যন্ত। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৬২ পয়েন্টে ওঠে এসেছে। এর মাধ্যমে তিনদিনের টানা উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো ১৮০ পয়েন্ট। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।


দিনভার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৫৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬০৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৪৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাজারটিতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৫টির। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই হাসপাতালের ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৭ কোটি ৮৩ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সোনালী পেপার, বিডিকম, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, জিনেক্স ইনফোসিস, ইয়াকিন পলিমার এবং বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম।


অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৪৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮২টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঋণ মওকুফের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন শর্ত
পরবর্তী নিবন্ধশিল্পে চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার