নিজস্ব প্রতিবেদক : নয়টি ব্রোকারেজ হাউজে শূন্য টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়ার একদিন পরেই মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে লেনদেন শুরুর আগেই সর্বনিম্ন দামে বা ২ শতাংশ কম দামে শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে আসা এ ধরনের বিক্রির আদেশ দেওয়াকে বেআইনি বলছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আইন লঙ্ঘন করে অসৎ উদ্দেশ্যে এমন বিক্রয় আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এ জন্য ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে বিএসইসি। এসব ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমবি) কাছে এ বিষয়ে ১৫টি পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এই ১৫ ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ হাউস, শাহেদ সিকিউরিটিজ, শেলটেক ব্রোকারেজ, আইডিএলসি সিকিউরিটিজ, এস অ্যান্ড এইচ ইকুইটি, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ, এমটিবি সিকিউরিটিজ, মার্কেনটাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ইউসিবি স্টক ব্রোকেরেজ, গ্লোবাল সিকিউরিটিজ, শান্তা সিকিউরিটিজ, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ, কাইয়ুম সিকিউরিটিজ ও মিডওয়ে সিকিউরিটিজ।
বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর আগেই সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ১০টার মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের শেয়ার দুই শতাংশ দাম কমিয়ে বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়। এতে লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয় ও শুরুতে মূল্য সূচকের বড় পতন হয়।
ফলে লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ৭৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। লেনদেন চলাকালীন বিষয়টি বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আসে ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। এতে বড় পতন কাটিয়ে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন একটি সিকিউরিটিজের দাম একদিনে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ কমতে পারে। কিন্তু নির্দেশনার কোথাও বলা নেই প্রি-ওপেনিং সেসনে (লেনদেন শুরুর আগের ১৫ মিনিট) সর্বনিম্ন দামে বিক্রয় প্রস্তাব দেওয়া যাবে। ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে আজ (মঙ্গলবার) লেনদেন শুরুর আগেই যেভাবে দুই শতাংশ দাম কমিয়ে বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো নিউজ বলেন, আইনে কোথাও বলা নেই লেনদেন শুরুর আগেই দুই শতাংশ দাম কমিয়ে বিক্রির আদেশ দেওয়া যাবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে একদিনে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ পর্যন্ত দাম কমতে পারবে। ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ১০টার মধ্যে দুই শতাংশ কম দামে যেভাবে বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েছে তা আইনের লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, এ জন্য ১৫টি ব্রোকারেজ হাউজের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তারা যদি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারে তাহলে পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার (১৮ এপ্রিল) শূন্য টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়ায় নয়টি ব্রোকারেজ হাউজের ১৫ ট্রেডারকে বহিস্কারের নির্দেশ দেয় বিএসইসি।
এর মধ্যে রয়েছে- পার্কওয়ে সিকিউরিটিজের একটি ওয়ার্ক স্টেশন, আইসিবি সিকিউরিটিজের ৫টি, কাইয়ুম সিকিউরিটিজের একটি, রশিদ ইনভেস্টমেন্টের দুটি, শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের দুটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজের একটি, টিকে খান সিকিউরিটিজের একটি, জেকেসি সিকিউরিটিজের একটি ও কাজী ইকুইটি’র একটি ওয়ার্ক স্টেশন।
এই ওয়ার্ক স্টেশনগুলো থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যারস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, বিকন ফার্মা এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের বড় অঙ্কের শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়।
শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া বলতে বোঝায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়া হলেও, কতো টাকায় তা বিক্রি করা হবে তা উল্লেখ না করা। অর্থাৎ নয়টি কোম্পানির বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়া হলেও তার কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।