নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার টানা আট কার্যদিবস দর পতনের পর বিএসইসি এবং অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সোমবার ঘুরে দাঁড়ালেও মঙ্গলবার ও বুধবার আবারও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিকে টানা দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে লেনদেনর খরা চলছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর শেয়ারবাজার ভালো হওয়ার কথা ছিল। দরপতনের কথা ছিল না। কিন্তু কোন কিছু কাজ করতেছে না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশায় কাজ করছে। সে জন্য প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিযে আসতে হবে যাতে শেয়ারবাজারের লেনদেনের গতি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থাহীনতার অভাব। তিনি বলেন, বাজারে ভালো-মন্দ সব ধরনের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার যৌক্তিক মূল্যের নিচে নেমে গেছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের উচিত প্রতিষ্ঠান বাছাই করে শেয়ার কেনা। তাহলে ভালো লাভ পাওয়া যাবে। এর দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। আবু আহমেদ আরও বলেন, সামনে বাজেট ঘোষনা হবে সেখানে যদি কোন প্রনোদনা থাকে তাহলে বাজার ভালো হবে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, টানা দর পতনের কারনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ জন্য প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দায়ি তাদের এগিয়ে এসতে হবে। রাজ্জাক আরও বলেন, প্রতিদিনই শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। পতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কোম্পানিগুলোও। লোকসান কমাতে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। রাজ্জাক আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটানো হচ্ছে। এ দরপতনের পেছনে সরকারবিরোধী একটি চক্র সক্রিয়। তারা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এর আগে টানা আট কার্যদিবসের ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫৫৫ পয়েন্ট কমে গেলে গত রোববার মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাসকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে শেয়ারবাজার ভালো করতে দিকনির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় সোমবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনেই ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সূচকের এমন উত্থানের পরপরই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএসইসি।
এদিকে গত ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসই পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। গতকাল দর হারিয়েছে আড়াই শ টি কোম্পানি, যার মধ্যে দর পতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ১১৫ পয়েন্ট পতনের পর দিন ১১৮ পয়েন্ট উত্থানে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চাপ কাটবে ভেবেছিলেন যারা, তারা আবার হয়েছেন আশাহত। মঙ্গলবার ৫০ পয়েন্ট দরপতন আস্থায় যতটা চিড় ধরিয়েছিল পর দিন গতকাল আরও ২৩ পয়েন্টের পতন আরও আস্থাহীনতা তৈরি করতে পারে।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩.৮১ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৮৭.৬৪ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩.৮২ পয়েন্ট বা ০.২৭ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭.০৬ পয়েন্ট বা ০.৩০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৩.৪৫ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৮৭.৯৮ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৫১৩ কোটি ১১ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৪৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৬৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৬টির বা ২০.২৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৫০টির বা ৬৬.৬৭ শতাংশের এবং ৪৯টির বা ১৩.০৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১২০.২২ পয়েন্ট বা ০.৬৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৬২.৪০ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ১৮৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টির দর। সিএসইতে ১৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।