নিজস্ব প্রতিবেদক : আমদানি ব্যয় বাড়ার প্রেক্ষিতে মাত্র এক সপ্তাহ আগেই প্রায় সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ কমার তথ্য সামনে এসেছিল। এরপর মাত্র ছয় কার্যদিবসের মধ্যে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, নিম্নমুখী ধারা কাটিয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বর্তমান আমদানি ধারা অনুযায়ী, এ মুহূর্তে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে তা দিয়ে অন্তত ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
এর আগে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) পরিশোধের পর চলতি মাসের ৯ মে তা কমে ৪৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
আমদানি ব্যয় হিসাবে আকুর দেনার প্রায় ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর গত ১০ মে রিজার্ভ আরও কমে নামে ৪১ বিলিয়ন ডলারে। ওইদিন স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে বিশাল অঙ্কের এ আমদানি ব্যয় মেটানোর পর মাত্র ছয় কার্যদিবসের মধ্যেই নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ আবার ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভে নতুন করে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার যুক্ত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএ’র হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করলে দেশের রিজার্ভ আরও কমে আসবে। যদিও সংস্থাটির হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ না করে বিদ্যমান নিয়মেই হিসাব চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন মতে, রিজার্ভ থেকে দায় পরিশোধের পর কিছু অর্থ যোগ হয়েছে। প্রায় ছয় কার্য দিবস পরে রিজার্ভে ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। এ পরিমাণ মজুত দিয়ে আগামী ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
চলতি মে মাসের প্রথম ১২ দিনে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স এসেছে ৮৩৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন বা ৮৩ কোটি ৬১ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় (এক ডলার সমান ৮৭.৫০ পয়সা ধরে) ৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। মে মাসের প্রথম ১২ দিনে দৈনিক গড়ে ৬৯ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দৈনিক গড় প্রবাহ বিবেচনায় প্রবাসী আয়ের এ ধারা আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ঊর্ধ্বমুখী।
এসময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব (১০৫ কোটি ১১ লাখ ডলার) থেকে, যা মোট রেমিট্যান্সের ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, আরব আমিরাত ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং কুয়েত থেকে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ রেমিট্যান্স এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফ’র হিসাব পদ্ধতি মানা হবে না। সংস্থাটির হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করলে দেশের রিজার্ভ আরও প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার কমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। রিজার্ভের নিট ও গ্রসের হিসাব পৃথক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) অন্যান্য তহবিল বাদ যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ১৯৮৯ সাল থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে অর্থ জোগান দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন থেকেই রিজার্ভের গ্রস হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এর আগে এ পদ্ধতি নিয়ে আইএমএফ প্রশ্ন তোলেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারেই রিজার্ভ হিসাবায়ন অব্যাহত থাকবে।
গত বছরের অক্টোবরে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। পরে সংস্থাটির পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে সেফগার্ড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিলো। সেখানে রিজার্ভ হিসাবায়নে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তারতম্য উল্লেখ করে চলতি বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিরসনের সুপারিশ করা হয়। রেসিডেন্ট টু নন-রেসিডেন্ট অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাবায়ন, সংকলন এবং রিপোর্ট পদ্ধতি সংশোধন করতে বলে সংস্থাটি।
আইএমএফের মতে, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। অথচ এ আমানত রিজার্ভ হিসাবে বিবেচিত হবে না। তবে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইএমএফকে চিঠি দিয়ে প্রাথমিকভাবে রিজার্ভের হিসাবায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন না আনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বাড়ে আমদানি। তবে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় বাড়তি ডলার গুনতে হয় আমদানিকারকদের। এতে মজুত বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়ার বিপরীতে প্রভাব পড়ে ডলারে কেনাবেচায়।