নিজস্ব প্রতিবেদক : মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) গ্রাহকদের জন্য ‘ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ’ নামে ১০০ কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে অর্থের জোগান পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ বোর্ড মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। একই ধরনের সেবা দিচ্ছে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’। তবে নগদ এমএফএস সেবা দিলেও এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিল গঠন করলেও অনেক আগে থেকেই বিকাশ সিটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে এ কার্যক্রম শুরু করেছে। বিকাশের যোগ্য গ্রাহকদের তিন মাস মেয়াদে ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে, যার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে, এমন ব্যাংক এ তহবিল থেকে অর্থের জোগান পাবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা নেই (বিকাশ, নগদ), তারা যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সুবিধা নিতে পারবেন।
চুক্তির ভিত্তিতে তিন মাস মেয়াদি অর্থ সংগ্রহ করবে ব্যাংক। তিন মাস পর আগের দেনা পরিশোধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ই-কেওয়াইসি সম্পন্ন করে গ্রাহক হয়েছেন, শুধু তাদেরই ঋণ দেওয়া যাবে।
চলতি বছরের মার্চ মাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ (১০ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৪০৫) কোটি। এসব গ্রাহকের মধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছেন পাঁচ কোটি ৬৬ লাখ। শহরঞ্চলে রয়েছেন পাঁচ কোটি ২৪ লাখ। গ্রাহকদের মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার এবং নারী চার কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ২১৩টিতে।
বেড়েছে লেনদেন ও বেতন পরিশোধ : ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে কর্মীদের বেতন পরিশোধ। চলতি বছরের মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা কর্মীদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। গত বছরের একই মাসে (২০২১ সালের মার্চ মাস) এ মাধ্যমে বেতন পরিশোধ হয় দুই হাজার ২১৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যম বেতন পরিশোধের হার বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে বেড়েছে লেনদেনও। আলোচিত সময়ে এ সেবার মাধ্যমে মোট লেনদেন হয়েছে ৭৭ হাজার ২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের মার্চ মাসে লেনদেন হয়েছিল ৫৯ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৯ শতাংশের বেশি।
চলতি বছরের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্যাশ ইন হয়েছে ২৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা এবং ক্যাশ আউট ২০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে লেনদেন হয়েছে ২২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় দুই হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা, পরিষেবার এক হাজার ২৩২ কোটি টাকা, বিল পরিশোধ এবং কেনাকাটায় লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।