শেয়ারবাজারে ৫ কার্যদিবস ধরে সূচক নিম্নমুখী অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের মতো গতকাল মঙ্গলবারও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিনও শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারও ইউনিটির দও কমেছে। পাশাপাশি টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। এই নিয়ে টানা পাঁচ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দর পতন অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুর মধ্যে দেশের বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই ভয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তারা টাকা তুলে নিতে শেয়ার প্যানিক সেল দিচ্ছেন। প্যানিক সেলের পরিমাণ এতই বেশি যে বাজার আবারও দরপতনের ধারায় ফিরেছে। এর মধ্যে সোমবার সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে বড় সূচক পতন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, ঈদ পরবর্তী সপ্তাহে আট কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। সর্বশেষ ৫ কর্মদিবস টানা সূচক পতন হয়েছে। এই দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ২৬৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এবিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ডলারের অস্থিরতার প্রভাব সবজায়গাতে পড়েছে। পাশাপাশি জিনিসপত্র এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘটনা নিয়ে নানা রকম গুজবে বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন। এর আগে এরাই হুজুগে কিনেছিল। এদের বাধা দিয়ে লাভ নেই। তিনি বলেন, বাজারও অনেক পড়েছে, আশা করছি এখন বাড়বে।

তিনি বলেন, মার্কেটে শেয়ারের দাম কমার নিশ্চিয়ই কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে ডলারের দাম বেড়েছে, এ কারণে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করছেন। আরেকটি হলো করোনার সময় ব্যবসা-দোকানপাট বন্ধ করে কিছু মানুষ শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিল। এখন তারা পুরোনো ব্যবসায় ফিরেছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দরপতন ঠেকাতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭.৪২ পয়েন্ট বা ০.৪২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০৩.৫০ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১.৫২ পয়েন্ট বা ০.১০ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২.২৫ পয়েন্ট বা ০.০৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪০৮.৭৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৬৩.৬৬ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল একহাজার ২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার।

ডিএসইতে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৯টির বা ২৩.৪৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৪৫টির বা ৬৪.৬৪ শতাংশের এবং ৪৫টির বা ১১.৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, শাইনপুকুর সিরামিকস, জেএমআই হসপিটাল, সেলভো কেমিক্যাল, ফু-ওয়াং সিরামিক, লাফার্জ হোলসিম, ওরিয়ন ফার্মা, ফরচুন সুজ, এসিআই ফরমুলেশন ও ইউনিক হোটেল।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফু-ওয়াং সিরামিক, বঙ্গজ লিঃ, ডেফোডিল কম্পিউটার, সেলভো কেমিক্যাল, লাফার্জ হোলসিম, ফার্মা এইড, এফএএস ফাইন্যান্স, তিতাস গ্যাস ও নিউ লাইন ক্লথিং। দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- আর ডি ফুড, সোনারবাংলা ইন্সুঃ, আইপিডিসি, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, জুট স্পিনার্স, মেঘনা কন্ডিন্সড মিল্ক, বিএনআইসিএল, সাভার রিফ্রেক্টরীজ, পিপলস ইন্সুঃ ও মাইডান ফাইন্যান্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১২১.৩৮ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৪৫.১৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১৯৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দর। আজ সিএসইতে ২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএয়ারলাইন বেচে দেবে শ্রীলঙ্কা, বেতন দিতে ছাপানো হচ্ছে মুদ্রা
পরবর্তী নিবন্ধদেশে বাড়লো স্বর্ণের দাম