একদিন পর আবারও দরপতনে শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার টানা আট কার্যদিবস পতনের পর সোমবার বড় উত্থান হলেও একদিন পর মঙ্গলবার আবারও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি দর কমেছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এর আগে আট কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫৫৫ পয়েন্ট কমে গেলে গত রোববার মার্জিন ঋণের হার বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি কওে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি থেকে মার্জিন ঋণের হার বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, সিনিয়র অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাসকে নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৈঠকে শেয়ারবাজার ভালো করতে দিকনির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী ও বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় সোমবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক একদিনেই ১১৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সূচকের এমন উত্থানের পরপরই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএসইসি। বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে এখন থেকে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ড বাদে অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাট অফ ডেটে পুঁজিবাজারে কমপক্ষে তিন কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। আগে যেটা ছিল এক কোটি টাকা। একইভাবে পেনশন ফান্ড এবং স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ডের ক্ষেত্রে আগে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। সেটাকে বাড়িয়ে করা হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কমিশন সভা করে এ সিদ্ধন্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিএসইসি।

এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থাহীনতার অভাব। সে কারনে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে। দরপতনের কারনে শেয়ার বিক্রির মহোৎসবে মেতেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ারবাজারে বড় দর দরপতন হচ্ছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য এরপর সূচকের ঊর্ধ্বমুখী হতে খুব বেশি সময় নেয়নি। প্রথম ঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এতে আবারও শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। বরং বড় পতনের মধ্যদিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হওয়ায় হতাশ হতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

মূলত দুপুর ১২টার পর থেকে সূচক নিচের দিকে নামতে থাকে। আর লেনদনের শেষ দেড় ঘণ্টায় গড়পড়তা সব খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ২১১ পয়েন্টে নেমে গেছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৭৮টির। আর ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে এক কোটি ৯১ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ২৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জিএসপি ফাইন্যান্স।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, জেএমআই হসপিটাল, জিএসপি ফাইন্যান্স, সিলভা ফার্মা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিক, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, আইপিডিসি ও এসিআই ফর্মূলেশন।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সিলকো ফার্মা, সিলভা ফার্মা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ফার্মা, গোল্ডেন ফার্মা, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, আরামিট সিমেন্ট, গ্রিমিয়ার লিজিং, জিএসপি ফাইন্যান্স ও আইসিবি এমপ্লোয়িজ প্রভিডেন্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড-১: স্কীম-১।

দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সোনালী পেপার, পেপার প্রসেসিং, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, আমান ফিড, নিউলাইন ক্লোথিং, আরামিট সিমেন্ট, এসিআই ফর্মূলেশন, এসআলম কোল্ডরোল্ড, ইয়াকিন পলিমার ও জেএমআই হসপিটাল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৭০ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৯টির এবং ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপপুলার লাইফের খুলনা অঞ্চলের বীমা গ্রাহকের বীমা দাবীর চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠিত
পরবর্তী নিবন্ধজনতা ব্যাংকে মহাবিজয়ের মহানায়ক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন