নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারিভাবে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত ২৩ মে বিশেষ শর্তে চলতি বছর বাংলাদেশে ৬ লাখ টন গম রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে ভারতের সরকার। এবার বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বনিম্ন দামে গম কিনে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ভারতভিত্তিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাগাদিয়া ব্রাদার্স।
বাংলাদেশের সরকার অবশ্য এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাবটি বিবেচনায় রেখেছে। তবে সরকারের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে— বাগাদিয়া ব্রাদার্সের প্রস্তাবের পর এ বিষয়ে ‘প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া’ পূর্ববর্তী একটি প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ৫০ হাজার টন গম কিনতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করেছিল বাংলাদেশের সরকার। এই টেন্ডারের বিপরীতে গত সপ্তাহে একটি দেশীয় কোম্পানি প্রতি টন ৫৪৮ দশমিক ৩৮ ডলার দরে এই গম সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল সরকারকে। এই দরের মধ্যে পরিবহন ব্যয় এবং বন্দরে গমের চালান খালাসের খরচও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সোমবার, চলতি সপ্তাহে বাগাদিয়া ব্রাদার্স ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এগ্রোকর্পের প্রস্তাবের আগ পর্যন্ত দেশীয় ওই প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবটিই ছিল সর্বনিম্ন দরের— উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের শস্য ক্রয় কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রতি টন গম ৪৬৪ দশমিক ৫৫ ডলারে বাংলাদেশে সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই দরের মধ্যে পণ্য পরিবহন ও বন্দরে মাল খালাসের খরচও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আর নিজেদের প্রস্তাবনায় এগ্রোকর্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গম পরিবহন ও বন্দরে তা খালাসের খরচসহ টন প্রতি ৪৬৫ দশমিক ৩৮ ডলার দরে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন গম সরবরাহ করতে পারবে কোম্পানি।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশও গম আমদানি করে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গমের সরবরাহ আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে গমের দাম। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিপাকে পড়ে।
গমের দাম কী পরিমাণ বেড়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ গম আমদানির রেকর্ডে তার আঁচ পাওয়া যায়। সরকারি রেকর্ড বলছে, সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল গম আমদানি করা হয়েছিল। সে সময় পরিবহন ও বন্দরে পন্য খালাসের খরচসহ প্রতি টন গম বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৩৯৯ দশমিক ১৯ ডলার।
এদিকে, গমের দাম বৃদ্ধি এবং কৃষ্ণ সাগর অঞ্চল থেকে সরবরাহে ধস নামায় গম রপ্তানির জন্য চাপ বাড়তে থাকে ভারতের ওপর।
গম উৎপাদনে বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষে আছে চীন, তারপরই ভারতের অবস্থান; কিন্তু বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর খুব অল্প পরিমাণ গম রপ্তানি করতে পারে দেশটি।
গত মার্চে তীব্র দাবদাহের ফলে চলতি মৌসুমে ভারতে গমের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, দেশটিতে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। এ কারণে অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ১৩ মে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।
এদিকে, এ নিষেধাজ্ঞায় উদ্বেগে পড়ে বাংলাদেশ। কারণ, গমের জন্য দেশটি প্রায় পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সাত লাখ টন গম আমদানি করেছিল বাংলাদেশ সরকার। তার মধ্যে ৬৫ শতাংশই আমদানি করা হয়েছিল ভারত থেকে।
এ পরিস্থিতিতে ভারতের সরকার গত ১৭ নিষেধাজ্ঞা খানিকটা শিথিল করে। দেশটির বাণিজ্যিক কর্মকর্তারা গত ২৩ মে জানিয়েছেন, চলতি বছর বাংলাদেশে ৬ লাখ টন গম পাঠাবে ভারত।
বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার ৪০ দিনের মধ্যে গমের চালান পাঠাতে হবে বাংলাদেশের বন্দরে। চট্টগ্রাম কিংবা মোংলা— যে কোনো বন্দরেই পাঠানো যাবে গমের চালান।
ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের গম বাংলাদেশ গ্রহণ করবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে টেন্ডারের চুক্তিপত্রে।