নিজস্ব প্রতিবেদক : বিনিয়োগকারীদের সাহস দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমাদের শেয়ারবাজারে বড় কোন সমস্যা নেই। বর্তমানে বহির্বিশ্বের কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। এটা সাময়িক, আপনারা ভয় পাবেন না।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) সেলিব্রেটি হলে ‘অংশীদারত্বের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক ত্রিপক্ষীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) আয়োজিত এ সংলাপে বিএসইসি ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) অংশগ্রহণ করে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যারা না জেনে, না বুঝে মানুষকে ভয় দেখায় তারা জাতীয় শত্রু।
তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে বড় কোনো সমস্যা নেই। দেশের অর্থনীতি খুবই শক্তিশালী। ভয়ের কিছু নেই। আপনারা (শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী) ভয় পাবেন না।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা শেষে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করবে এবং তা করতে না পারলে সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে দেবে-এটাই তাদের দায়িত্ব। কিন্তু কিছু কোম্পানি বারবার সময় নিয়েও অবন্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে দিচ্ছে না। তাহলে তারা কি সেই লভ্যাংশ খরচ করে ফেলেছেন?
তিনি বলেন, আমরা যখন অবন্টিত লভ্যাংশ নিয়ে কাজ শুরু করলাম তখন অনেক স্বনামধন্য কোম্পানিও সেই তালিকায় ছিল। কিন্তু সেই লভ্যাংশ যখন স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে সংগ্রহ করা শুরু হলো, এখন তারা বলছে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছে।
শুরুতে ২২ হাজার কোটি টাকার অবন্টিত লভ্যাংশের তথ্য পাওয়া গেলেও এখন সেটা ৭০০-৮০০ কোটিতে নেমে এসেছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এই সময়ের ব্যবধানে এতো টাকা কোথায় গেলো? এই বিষয়টি অনুসন্ধানে আমরা অডিট শুরু করবো। শেয়ারবাজারে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের বিষয়ে অডিট করা হবে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, কোম্পানিগুলো যখনই অবন্টিত লভ্যাংশ স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে প্রেরণের জন্য সময় চেয়েছে, তখনই দেওয়া হয়েছে। এভাবে বারবার সময় নিচ্ছে। কিন্তু এখনও দেয়নি। কিন্তু অডিট শুরু করার পরে সময় দেওয়া হবে না। এজন্য আগামী ৩১ মে’র মধ্যে সবাইকে অবন্টিত লভ্যাংশ দেওয়ার অনুরোধ করছি। অন্যথায় ৩১ মে’র পর আমরা একটু কঠোর হলে আশা করি আপনারা মনঃক্ষুণ্ন হবেন না।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে আইসিবি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু নানা সময় কিছু বাধার সম্মুখীন হয়ে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এ প্রতিষ্ঠানটিকে এফডিআরের অর্থ ফেরতের চাপ, বিনিয়োগসীমা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আশা করি এগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
সংলাপে অংশ নেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ ১ ঘণ্টা আলোচনা হয় বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। শেয়ারবাজার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু। আশা করি আগামী সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ভালো কিছু হবে।
সিএমএসএফের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএপিএলসির সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা এবং বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অফ অপারেশন (সিওও) মো. মনোয়ার হোসেন একটি প্রেজেন্টেশন দেন। অনুষ্ঠানের আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএপিএলসির ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও সেলিম আর এফ হোসেন।
এছাড়াও ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, রূপালি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী সানাউল হক এবং বিএপিএলসির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মাহমুদ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। প্যানেল আলোচনা পরিচালনা করেন বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান।