নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটছেই না। ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ফলে হতাশা দিয়েই ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস পার করলেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। ঈদের আগেও পতনের মধ্যে ছিল শেয়ারবাজার।
ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই মূল্যসূচকের ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যায়। সূচক হঠাৎ একটু ঊর্ধ্বমুখী হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার পতনে ফিরে যায়। অবশ্য লেনদেনের বেশিরভাগ সময় সূচক পতনের মধ্যেই থাকে। ফলে ঈদ পর শেয়ারবাজার ভালো হবে এমন আশায় ছিলেন যেসব বিনিয়োগকারীরা তারা দিনের লেনদেন শেষে হতাশ হয়েছেন।
নানা ইস্যুতে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে পতনের মধ্যে রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধালে শেয়ারবাজারের পতন আরও ত্বরান্বিত হয়। এর মধ্যেই চলে আসে রোজা। রোজা ও ঈদের খরচ যোগাড় করতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। ফলে টানা পতনের মধ্যে নিমজ্জিত হয় বাজার।
পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিনে দাম কমার সর্বোচ্চসীমা কমিয়ে আনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু এরপরও দরপতন ঠেকানো যাচ্ছিল না। উল্টো বাজারে তারল্য সংকট দেখা দেয়।
বাজারে তারল্য সংকট দূর করতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলের এক’শ কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করে আইসিবি। আইসিবির এ বিনিয়োগ সুফল এনে দিতে না পারলে বাজারে তদারকি বাড়ায় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। অনিয়ম করায় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু ঈদের আগের শেষ সপ্তাহে আবার পতনের মধ্যে পতিত হয় শেয়ারবাজার।
ঈদের আগের শেষ সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা দশমিক ১০ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমে ১৭ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক কমে ১৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২০ শতাংশ। ফলে হতাশা নিয়েই ঈদে যেতে হয় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের।
আর ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। এতে লেনদেনের ৩০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৫ পয়েন্ট পড়ে যায়।
লেনদেনের শেষদিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় সূচকের পতনের মাত্রা কিছুটা কমে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৬৪৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৭টির। আর ৫১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৪০১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৩০ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই হাসপাতালের ২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৫ কোটি ৩০ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউনিক হোটেল।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আইপিডিসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, ওরিয়ন ফার্মা, শাইনপুকুর সিরামিক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৪টির ও ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।