৫১ বছরে বাজেট বেড়েছে ৮৬৩ গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা পাস হবে আগামী ৩০ জুন। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট।

এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং এম সাইফুর রহমান সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট পেশ করেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরই ধারাবাহিতকায় বুধবার (০৯ জুন) ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সে হিসেবে বাজেটের আকার বেড়েছে ৮৬৩ গুণ।

আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে।

এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশ কিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ওলট-পালট করে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে কয়েক দফায় বেড়েছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম। ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। একই কথা বলেছে আইএমএফও। অন্যদিকে তীব্র খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯৭২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ জন অর্থমন্ত্রী (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক শাসক) বাজেট পেশ করেছেন। তারা হলেন- তাজউদ্দীন আহমেদ (১৯৭২-৭৩, ১৯৭৩-৭৪ ও ১৯৭৪-৭৫), ড. আজিজুর রহমান (১৯৭৫-৭৬), মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (১৯৭৬-১৯৭৭, ১৯৭৭-৭৮ ও ১৯৭৮-৭৯), ড. এম এন হুদা (১৯৭৯-৮০), এম সাইফুর রহমান (১৯৮০-৮১, ১৯৮১-৮২, ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৪-৯৫, ১৯৯৫-৯৬, ২০০২-০৩, ২০০৩-০৪, ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭) অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন।

এছাড়া এম সায়েদুজ্জামান (১৯৮৪-৮৫, ১৯৮৫-৮৬, ১৯৮৬-৮৭ ও ১৯৮৭-৮৮), মেজর জেনারেল এম এ মুনিম (১৯৮৮-৮৯ ও ১৯৯০-৯১), ড. ওয়াহিদুল হক (১৯৮৯-৯০), শাহ্ এএমএস কিবরিয়া (১৯৯৬-৯৭, ১৯৯৭-৯৮, ১৯৯৮-৯৯, ১৯৯৯-২০০০, ২০০০-০১ ও ২০০১-০২) এবং ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম (২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯) অর্থবছরে বাজেট ঘোষণা করেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত একটানা ১০ বার বাজেট পেশ করেন। এর আগে তিনি ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ দুই অর্থবছরে বাজেট পেশ করেছিলেন।

বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেট (২০১৯-২০ অর্থবছর) উপস্থাপন করেছিলেন ২০১৯ সালের ১৩ জুন। ২০২০ সালের ১১ জুন উপস্থাপন করেন দ্বিতীয় বাজেট। ২০২১ সালের ৩ জুন উপস্থাপন করেন তৃতীয় বাজেট। আগামী ৩ জুন উপস্থাপন করবেন তার চতুর্থ বাজেট।

সংসদে ১২ বার বাজেট পেশ করে রেকর্ড করেন প্রয়াত এম সাইফুর রহমান এবং আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে টানা ১০টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড শুধু মুহিতের। শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০টিসহ মোট ১২টি বাজেট পেশ করেছেন মুহিত। এর আগে তিনি এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দুই অর্থবছরের বাজেট দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের বাজেট উপস্থাপনে একটি স্থানে এখনও অনন্য তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ছিলেন দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ রাজনীতিবিদ, যিনি সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী মোট যে ১৩ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেছেন, তারা ছিলেন হয় অবসরপ্রাপ্ত আমলা, সেনা কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ বা ব্যবসায়ী। এরা কেউই পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ ছিলেন না।

এক অর্থবছরে দুইবার বাজেট উপস্থাপনের উদাহরণও আছে বাংলাদেশে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়ে মূল আর্থিক কাঠামো ঠিক রেখে নতুন করে বাজেট উপস্থাপন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া।

বাজেট যে শুধু অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা দিয়েছেন, তা নয়। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসক হিসেবে তিনটি বাজেট উপস্থাপন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ তিনটি, শাহ এএমএস কিবরিয়া ছয়টি, এম সাইদুজ্জামান চারটি বাজেট দেন। অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দুটি এবং ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একটি বাজেট পেশ করেন। এরশাদ সরকারের দুই অর্থমন্ত্রী এম এ মুনিম দুটি এবং ওয়াহিদুল হক একটি বাজেট উপস্থাপন করেন।

বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে মীর্জা নুরুল হুদা একটি বাজেট দেন। খন্দকার মোশতাক সরকারের আমলে দেশের প্রথম টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের বাজেট দেন এ আর মল্লিক।

এদিকে চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের চারজন অর্থমন্ত্রী ২১টি বাজেট দিয়েছেন। বিএনপির তিন মেয়াদের শাসনামলে তিনজন ১৬টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় পার্টির আমলে নয়টি বাজেট ঘোষণা করেন চারজন অর্থমন্ত্রী। তিনটি বাজেট দিয়েছে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। এই তিন মেয়াদের প্রথম অর্থাৎ ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা, নতুন বাজেটে তা পৌনে সাত লাখ টাকার বেশি হতে যাচ্ছে, যা শেষ মুহূর্তে কিছু কম-বেশি হতে পারে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এভাবে প্রতিবছরই বেড়েছে বাংলাদেশের বাজেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডলারের দাম কমলো ৫০ পয়সা
পরবর্তী নিবন্ধ৩ প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণা