মুগরির দাম কিছুটা কমলেও চাল ডালও তেলের দাম বাড়তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রজধানীতে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও চাল, ডাল, তেলের দাম বাড়তি দামে বিক্রয় হচ্ছে। ভরা মৌসুম চালের দামের সুফল পাচ্ছে ক্রেতারা। চাল ডাল তেল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্নও মধ্যম আয়ের মানুষ। এদিকে ভোজ্যতেলের দাম সরকার যে দামে নির্ধারণ করেছে তার যে বাড়তি দামে নিচ্ছে খুচরা বিক্রয়তা। লিটার প্রতি ৭ টাকা বাড়লেও কেউ কেউ ১০ টাকার বেশি নিচ্ছে। নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ধরা হয়েছে ১৮৫ টাকা। কিন্তু বিক্রয়তা নিচ্ছে আরও বেশি আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের খুচরা দাম বেড়ে হয়েছে ২০৫ টাকা। যা আগে ছিল ১৯৮ টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৯৯৭ টাকা করা হয়েছে তবে হাজার টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। যেটি ৯৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিলো। আর এক লিটার খোলা পাম তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৮ টাকা। ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অটো রাইস মিল মালিকরা চাল মজুত করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভরা মৌসুমেও বাজারে চালের সরবরাহ নেই। আগের অর্ডারের চালও ঠিকঠাক মতো পাচ্ছেন না তারা। অন্যদিকে, মিল মালিকরা বলছেন, মিল পর্যায়ে নতুন করে চালের দাম বাড়ানো হয়নি। উৎপাদন কম, ধানের দাম বাড়া, টানা বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে চালের দাম বাড়ছে। দেশে এখন চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এসময় চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। ভরা মৌসুম হলেও রাজধানীর বাজারে প্রতিদিন দু-এক টাকা বাড়ছে চালের দাম। একই অবস্থা গ্রামগঞ্জের বাজারেও। দেশের অন্যতম চালের মোকাম নওগাঁ, কুষ্টিয়ার খাজানগর, দিনাজপুর ও ঢাকার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে চালের দামের এ চিত্র সম্পর্কে জানা যায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়। ভালো মানের সরু (নাজিরশাইল ও জিরাশাইল) চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়।
দেশি ভালো মানের ডাল কেজি ১৪০ টাকা, কয়েক দিন আগেও ছিলো ১৩০ টাকা, এদিকে উচ্চবিত্তের আয় লাগামহীন বাড়লেও মধ্যবিত্তের আয় কিন্তু বাড়েনি। জীবেনযাত্রা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম কমেছে। কেজিতে এই মুরগির দাম কমেছে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সোনালি মুরগির পাশাপাশি কমেছে শসার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে শসার দাম কমে অর্ধেকে চলে এসেছে। তবে আগের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর, টমেটো। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে রায়সাবাজারের ব্যবসায়ী বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে সোনালি মুরগির দাম কমতির দিকে। কিছুদিন আগে সোনালি মুরগির কেজি ৩৩০ টাকা বিক্রি করেছি, সেই মুরগি এখন ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। মনে হচ্ছে সামনে সোনালি মুরগির দাম আরও একটু কমতে পারে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের মতো সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই সবজির দামে পরিবর্তন আসেনি। তবে গত সপ্তাহে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম কমে এখন ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিটির দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি। টমেটোর মতো অপরিবর্তিত রয়েছে বরবটি ও বেগুনের দাম। বরবটির কেজি বিক্রি হ”েছ ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তবে করলার দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এসেছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এছাড়া কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কচুর লতি বিক্রি হ”েছ ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে নতুন আসা বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

সবজির দামের বিষয়ে কলতাবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, এই সময় সাধারণত সবজির দাম বেশি থাকে। কারণ এখন সবজির সরবরাহ কম। আমাদের ধারণা আরও কয়েক মাস সবজির দাম বাড়তি থাকবে। শীতের সবজি আসলে আবার দাম কমে যাবে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হ”েছ ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। আর পেঁয়াজ বিক্রি হ”েছ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এগুলোর দামে পরিবর্তন আসেনি।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। চিংরি মাছ বিক্রিয় হচ্ছে কেজি ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে ১৩১৫ কোটি টাকা দেবে এডিবি
পরবর্তী নিবন্ধসপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে সারে তিন হাজার কোটি টাকার উপরে