নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে রপ্তানিতে বৈচিত্র্যের বিকল্প নেই। এ জন্যই রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। আর এক্ষেত্রে উপ-আঞ্চলিক, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকতর উন্নয়নে ১৪ দশমিক ৩ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ হাজার ৩১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা (প্রতি ডলার সমান ৯২ টাকা ধরে)।
এ জন্য বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বাংলাদেশ সরকার ও সংস্থাটির মধ্যে ভার্চুয়ালি একটি চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও সংস্থাটির পক্ষে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং চুক্তিপত্রে সই করেন। আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানো, দক্ষতা, পূর্বাভাসযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা উন্নয়নে এ ঋণ ব্যবহার করা হবে। বৃহস্পতিবার এডিবির ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এডিমন গিন্টিং বলেন, ‘বাংলাদেশের নীতি ও কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে এডিবি। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য রপ্তানি বৈচিত্র্য এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করছে।’
এডিবি সহায়তা ২০২৭ সালের মধ্যে আখাউড়া, সোনামসজিদ এবং তামাবিল বর্ডার ক্রসিং পয়েন্টে (বিপিসি) আমদানি ও রপ্তানি করা কার্গোর পরিমাণ ৫০ শতাংশ বাড়াতে সাহায্য করবে। যেখানে গড় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং কার্গো ট্রান্সশিপমেন্ট সময় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেবে। তিনটি বিসিপিতে ই-পেমেন্ট কার্যকর করা হবে, প্রতি বছর ৫২ লাখ টন আন্তর্জাতিক ট্রানজিট কার্গো পরিচালনা করার ক্ষমতা বাড়বে। কেন্দ্রীয় কাস্টমস ল্যাবরেটরি, শুল্ক-গুদাম এবং কাস্টমস আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ একাডেমি ডিজাইন করা হবে এসব কাজকে এগিয়ে নিতে।
এডিবি জানায়, বাংলাদেশ রপ্তানির গুণগতমান উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তি সই এবং সীমান্ত সংস্থা ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় করা হবে। বাণিজ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য সুবিধা সংস্কার করে চলেছে। সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনোমিক কো-অপারেশন ইন্টিগ্রেটেড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (এসএসসি) সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসডিপি) বাণিজ্য নীতি সংস্কার করবে এবং আখাউড়া, সোনামসজিদ এবং তামাবিল বিসিপিতে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সুবিধা উন্নত করবে। এটি একটি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের মাধ্যমে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করলে সংযোগ বাড়াবে।
এডিবি সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে— ৯ কোটি ডলার নীতিভিত্তিক ঋণ, যা দেশের শুল্ক আইনি কাঠামোকে আন্তর্জাতিক মান মেনে নিয়ে আসা, কার্গো ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার উন্নতি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ক্ষমতা জোরদার করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে সহায়তা করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীতি সংস্কারের পরিপূরক হিসেবে ৫ দশমিক ৩ কোটি ডলারের প্রকল্প ঋণ আখাউড়া, সোনামসজিদ এবং তামাবিল সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্টে এবং বাংলাদেশ ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি (বিএলপিএ) সমন্বিত স্থলশুল্ক স্টেশন এবং স্থলবন্দর নির্মাণ করবে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং কার্গো ট্রান্সশিপমেন্ট অপারেশনের জন্য সুবিধা এবং সরঞ্জামও ইনস্টল করা হবে।
এডিবি তার প্রযুক্তিগত বিশেষ তহবিল থেকে অনুদান হিসেবে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তা দেবে। যাতে শুল্ক আইনি কাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং সীমান্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাপোর্ট করা হবে। কেন্দ্রীয় শুল্ক সুবিধার একটি অপারেশনালাইজেশন প্ল্যান প্রস্তুত করা, বিপিসির আধুনিক শুল্ক কার্যক্রম বাস্তবায়ননে এনবিআরের সক্ষমতা জোরদার করা হবে।