নিজস্ব প্রতিবেদক: লাগামহীন ভাবে বাড়ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রাসায়ন খাতের কোম্পানি ইমাম বাটনের শেয়ারের দর। গত ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হয় গত ১৬ বছরে একবারও ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। কোম্পানিটির রিজার্ভ নেগেটিভ। ঠিকভাবে আর্থিক প্রতিবেদও প্রকাশ করে না। তারপরও ‘জেড’ গ্রুপের কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে লাগামহীন ভাবে। যা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিলো ২৪ টাকা। গতকাল বুধবার দিন শেষে লেনদেন হয় ১৩২ টাকা ৬০ পয়সায়। গতকাল কোম্পানিটি শেয়ার লেনদেন ১২০ টাকা টাকা ৫০ পয়সায় থেকে ১৩৪ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে উঠানামা করে। অর্থাৎ গত চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ১০৮ টাকা।
এমন দূর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। এতে করেও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি, কেন লাগামহীনভাবে বাড়ছে ইমাম বাটনের শেয়ারের দর। বিএসইসি কেন চুপ অভিযোগ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানিটির এমন অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নজরে আসার পর থেকে টানা পাঁচ বার বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবুও বাজারে শেয়ারের সংকট তৈরী করে শেয়ারদর বাড়াচ্ছে একটি চক্র। যা বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বিএসইসি বাজারকে মনিটরিং করে বুঝতে পারে কোন হাউজ থেকে বাজারে শেয়ারের ক্রয় বা বিক্রয় আদেশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গত চার মাস যাবৎ ইমাম বাটনের শেয়ারদর কেন বাড়ছে বা কারা এই শেয়ার নিয়ে বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করছে, সে বিষয়ে বিএসইসিকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাহলে কি বিএসইসির ইশারাতেই ইমাম বাটনের শেয়ার কারসাজি হচ্ছে? প্রশ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। লোকসানী ও ডিভিডেন্ড দিতে না পারা ইমাম বাটনের শেয়ার নিয়ে বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিরি কারণে ভালো কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। যা বাজারকে আরও খারাপের দিকে ধাবিত করবে বলে মনে করছে বাজার বিশ্লেষকরা। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিলো ১৬ টাকা। এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড তো দুরের কথা, ঠিকভাবে সময় মতো আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি। শেয়ারদর ছিলো নাগালের ভেতরে। গত বছর ডিএসইর সূচক ৭০০০ পয়েন্ট ক্রস করার পরও শেয়ারটির তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে কোম্পানিটির শেয়ার যেন পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছে। এতে করে বিষয়টি নিয়ে নানা ধরণের মন্তব্যের সৃষ্ঠি হয়েছে।
শেয়ারটি নিয়ে একটি কারসাজি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা লোকসানী এই কোম্পানিটির শেয়ার নিজেদের কব্জায় রেখে বড় প্রাইস করছে। এখন শেয়ারটি অনেক বড় প্রাইজ হয়ে ১২২ টাকা অতিক্রম করেছে। এই সময়ে শেয়ারটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হুমুড়ি খেয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, সেই চক্র নিজেদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই এই শেয়ারটির বিনিয়োগকারীরা বড় আকারের লোকসান গুণবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
ইমাম বাটন বর্তমানে ‘জেড’ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩০ দশমিক ০৮ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৯ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬০ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার।