এ বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক : এমডি আব্দুল মান্নান

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) বিশেষায়িত রাষ্ট্রায়ত্ব মালিকানাধীন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করতে ১৯৮৭ সালে গঠন করা হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।

লক্ষ্য ছিল, কৃষি খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের ১৬টি জেলার উন্নয়ন। সেই লক্ষ্য কম-বেশি কিছুটা পূরণ হলেও ৩৪ বছরের অধিকাংশ সময়ই লোকসানে বছর পার করেছে ব্যাংকটি। তবে এ বছরেরর মধ্যে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ব্যাংকিং জগতের পরিচিত মূখ ও ব্যাংকটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান। তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, গত ২৩ মার্চ মোবাইল অ্যাপস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং উদ্বোধন করেছি।

অনলাইন ব্যাংকিং চালুর পর আমরা গ্রাহকদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। আর আমাদের ৩৮৩টি শাখা সম্পূর্নরুপে আনলাইনে চলে আসছে। কতো টাকা লেনদেন হচ্ছে এটা প্রত্যেক দিনের লেনদেন প্রত্যেক দিনেই জানতে পারছি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার কারণে করোনার মধ্যে দেশের অর্থনীতি চাকা চাঙ্গা রয়েছে।

রাকাবকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান। এরই অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ৮২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এমডি বলেন, বেশ কিছুদিন থেকেই পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর অনুরোধ করে আসছিলাম আমরা। এবার সে অনুরোধে সাড়া দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্প্রতি মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। অর্থ বিভাগও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করছে।

অর্থ বিভাগে পাঠানো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকটির রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের শাখাগুলোয় কৃষি ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়িক কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কাঠামো সুদৃঢ়করণ এবং সার্বিকভাবে রাকাবের ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক ব্যাংকে উন্নীত করার লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য পরিশোধিত মূলধন ৮২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার সুপারিশ করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয়।

এমডি আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটি লোকসানে রয়েছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাংকটি চরম তহবিল সংকটে ভুগছে। আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার প্রায় ১০০ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের বাইরে। কিন্তু এ ঋণগুলো কৃষকদের স্বল্প সুদে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন সময়ে সরকারের নির্দেশে কৃষকদের প্রায় ৮১৫ কোটি টাকার সুদ মওকুফও করা হয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে তেমন কোনো ভর্তুকি পাওয়া যায়নি।

এ কারণে তহবিল সংকট আরো তীব্র হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদি বাড়তি মূলধন পাই, তাহলে আমরা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণের যে অসমতা রয়েছে সেটা কমিয়ে আনতে পারব।

পাশাপাশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষও আমানত বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে দেশের প্রায় সব ব্যাংকই অনলাইনে চলে গেছে। দেরিতে হলেও রাকাবও নিজেকে অনলাইন ব্যাংকিং জগতে সামিল করেছে। এরই অংশ হিসেবে রাকাব গত ২৩ মার্চ মোবাইল অ্যাপস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা উদ্বোধন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অনলাইন ব্যাংকিং চালুর পর আমরা গ্রাহকদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। এই অ্যাপসটির সাথে লাইভে আছে নগদ, বিকাশ, রকেট, উপায়, এর মাধ্যমে যেকোনো সময় অনলাইনে টেনজংশন করা যাবে। পাশাপাশি রেমিটেন্সের দিকেও জোর দিয়েছি। এমডি আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা যদি বাড়তি পরিশোধিত মূলধন পাই একই সঙ্গে আমরা যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, তাতে আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে রাকাব ঘুরে দাঁড়াবে।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটিকে ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে প্রভিশন ঘাটতি বাবদ ৪১৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা দিয়েছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাকাবকে সুদ ভর্তুকি বাবদ ২৯৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এদিকে ব্যাংকের অটোমেশন বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকার মূলধন পুনর্গঠন বাবদ ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে রাকাবের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ২৯ শতাংশ বা ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। পাশাপাশি ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, রাকাবের মোট ৩৮৩টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে শহরে রয়েছে ৫০টি, পল্লী শাখা ৩৩৩টি। এসব শাখার মধ্যে ১৫১টি লোকসানে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লাভ করে ব্যাংকটি। এরপর টানা চার বছর লোকসান গুনছে রাকাব। সর্বশেষে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা আয় করে ব্যাংকটি। এর বিপরীতে ব্যয় হয় ৫৮৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে লোকসান গুনতে হয় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতে প্লাবিত হচ্ছে উঁচু এলাকাও
পরবর্তী নিবন্ধভারতের ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান ড. মোমেনের