নিজস্ব প্রতিবেদক : সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা, যা টাকার হিসাবে (এক ডলার সমান ৮৯ টাকা) ১৬ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকার বেশি। তবে মে মাসে আসা রেমিট্যান্স আগের মাস এপ্রিল অপেক্ষা প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। গত বছরের একই মাসের (২০২১ সালের মে মাস) তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে।
একক মাস হিসেবে গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বুধবার (১ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশের ব্যাংকগুলোকে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও মানছে না ব্যাংকগুলো, এমনটা দাবি রপ্তানিকারকদের। দেশের ডলার বাজারে লাগামহীন দর বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমলো।
এদিকে রেমিট্যান্স কমার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত ঈদের আগে প্রবাসীরা নিজ পরিবারের জন্য অধিক হারে রেমিট্যান্স পাঠান। ঈদের আগে সবাই জমানো টাকা পাঠিয়েছেন, তাই মে মাসে কিছুটা কমেছে।
তবে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) দেশে পাঠাতে নানা প্রণোদনা দেওয়ার পরও সদ্য বিদায়ী মাসে কেন কমলো এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊধ্র্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের মে মাসে করোনার প্রকোপ থাকায় প্রবাসীরা সব টাকা নিয়ে দেশে ফেরেন, এতে রেমিট্যান্স ওই সময় বেড়েছিল। এরপর রেমিট্যান্সপ্রবাহ কিছুটা কমে আসে। আমরা উৎসাহ দিচ্ছি বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে। প্রবাসীরাও পাঠাচ্ছেন। ঈদুল ফিতরের আগে রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে। আমরা আশাবাদী আগামী মাসে (ঈদুল আজহার আগে) আবারও রেকর্ড রেমিট্যান্স আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছরের মে মাসে প্রবাসীরা ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন দেশে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আসে ১৭০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার, মার্চে ১৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার এবং এপ্রিলে আসে ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ৩৪৫.৬৭ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এরপর রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক (২৫৮.২৯ মিলিয়ন ডলার), অগ্রণী ব্যাংক (১২৫.৮৯ মিলিয়ন ডলার), সাউথইস্ট ব্যাংক (১০৫.৪৭ মিলিয়ন ডলার)। তবে এসময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে।
২০২১ সালের মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বা দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা। এরপর গত ১২ মাসের মধ্যে কোনো মাসেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসেনি।
গত রোববার (২৯ মে) এখন থেকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে ৮৯ টাকা এবং বিসি সেলিং রেট ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রির সময় হার অনুসরণ করবে ব্যাংক। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি) প্রস্তাব অনুসারে এ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমানে খোলাবাজারে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে এসেছে। রাজধানীতে গতকাল মঙ্গলবার প্রতি ডলার ৯৮-৯৯ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে।