নিজস্ব প্রতিবেদক : এমসিসিআই’র সভাপতি মো. সায়ফুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভর্তুকির পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি যৌক্তিক। অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহ, অর্থনীতিতে তহবিল যোগান ও সামগ্রিক অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হলে বাজেটে ঘাটতি বাড়াতে সরকারের দ্বিধা করা উচিত নয়। এই ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক খাতের বাইরেও দৃষ্টি দিতে হবে। ঋণ নেওয়ার যথেষ্ট মাধ্যম ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয়তার সাথে কম খরচে আন্তর্জাতিক তহবিল প্রাপ্তি ভালোভাবে খোঁজ করা যেতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৫১তম জাতীয় বাজেট উত্থাপন করার জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এমসিসিআই সভাপতি শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের (৬ কোটি ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা) চেয়ে শতকরা ১২.৩২ শতাংশ বেশী এবং সংশোধিত বাজেটের (৫৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ১৪.২৫ শতাংশ বেশী। অর্থনীতি দ্রুত পুনরূদ্ধারের লক্ষ্যে সরকার আসন্ন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। চলতি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে শিল্পখাতকে সচল রেখে এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্যের হারকে সীমিত রেখে বাজেটে ৫.৬ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান ২০২১-২২ অর্থবছরে নির্ধারিত ৩৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১২.১২ শতাংশ বৃদ্ধি করে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৩৭০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে ১৪০ হাজার কোটি, আয়কর কর্তৃপক্ষকে ১২০ হাজার কোটি এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষকে ১১০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এমসিসিআই সবসময় কর প্রশাসনে অর্থপূর্ণ কাঠামোগত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে আসছে। যাতে করে কর প্রশাসন যথাযথভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। বিদ্যমান কাঠামোতে উচ্চ আয়ের অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠানও করের আওতার বাইরে থেকে যায়। যখন ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী যারা নিয়মিত কর প্রদান করে আসছে তাদের উপর আরও বেশি করের বোঝা চাপানো হয়। বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধা করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
সায়ফুল ইসলাম বলেন, গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ, নিম্ন-আয়ের মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতা বাড়ানোকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দরিদ্রদের মধ্যে নগদ অর্থের যথাযথ বন্টন নিশ্চিত করা দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম একটি প্রধান পদক্ষেপ হতে পারে। সরকার গত বছর এসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। যদি এ বছরও বৃহৎ পরিসরে দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য কার্যক্রমগুলোর পুনরাবৃত্তি করা যায় তবে এটি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ তার ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ও বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্নতির মাধ্যমে রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী গন্তব্যে পরিণত হতে পারে। এটি একটি কার্যকর রপ্তানি ব্যবস্থার বিকাশ করতে পারে বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পরে সম্ভাব্য নতুন বিশ্ব ব্যবস্থাকে পুঁজি করে, যাতে সুপ্ত সুযোগসমূহ ব্যবহার করা যায় এবং নতুন সম্ভাবনা তৈরী করা যায়। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের পণ্য ও বাজারের ক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য পর্যাপ্ত ও অর্থপূর্ণ গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এজেন্ডা হিসেবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণসহ রপ্তানি সুবিধার ক্ষেত্রে টেকসই সংস্কার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গরিবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির উপর নজর দেওয়া উচিত। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা ছিল, এই খাতে মাত্র ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাই এমসিসিআই মনে করছে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, নিরাপদ অভিবাসন ও শোভন কাজ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরীকরেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী এক কোটিরও বেশী বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে বসবাস করছে এবং কাজ করছে। এ বছর বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ কর্মীকে পাঠানোর চেষ্টা করছে। তবে বিভিন্ন পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়নই হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাবিকাঠি। সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টার ফলে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্ম-কর্মসংস্থান ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে রপ্তানিমুখী সবুজ কারখানার জন্য এই আয়কর হার ১০ শতাংশ, অন্য সব রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য ১২ শতাংশ। যাহোক, সকল রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য টিডিএস ০.৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমসিসিআই পরামর্শ দিচ্ছে যে, এই টিডিএস বর্তমান পরিস্থিতিতে আগের অবস্থায় রাখা উচিত। বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রস্ফীতি বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সমস্ত বিষয় করমুক্ত সীমা সমন্বয়ের দিকনির্দেশ করে। এ কারণেই বাজেটে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা পূর্বাবস্থায় দেখে এমসিসিআই কিছুটা হতাশ। এমসিসিআই করমুক্ত আয়কর সীমা কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছে। এমসিসিআই এনবিআর থেকে কর প্রত্যার্পণের জন্য একটি প্রতীকী তহবিল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।