মওকুফ করা ঋণের ওপর কর আরোপ অযৌক্তিক: এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত বাজেটে খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে অবিহিত করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

শনিবার (১১ জুন) মতিঝিল এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য, বিভিন্ন চেম্বার সভাপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হলে তা করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হবে কেন? দুর্ভোগ লাঘবের জন্যই খেলাপি ঋণ মওকুফ করা হয়ে থাকে বিধায় মওকুফকৃত ঋণের ওপর কর আরোপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা মনে করি আয়ের ওপর কর আদায় করাই হচ্ছে আয়করের মূলনীতি।

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানিকারক কর্তৃক রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশের পরিবর্তে এক শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করে পূর্বের ন্যায় (০.৫০ শতাংশ) রাখার প্রস্তাব করছি। অর্থবিলে রপ্তানির সংজ্ঞাকে সংকুচিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে ঋণপত্রের পাশাপাশি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে স্থানীয় সরবরাহকে রপ্তানির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। সোলার প্যানেল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে এক শতাংশ করা হয়েছে। সোলার প্যানেলের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ এবং ব্যবসায়িক পণ্যের সরবরাহের ওপর উৎসে করের হার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। উৎসে কর ফেরতযোগ্য এবং ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি করে বিধায় উৎসে কর প্রত্যাহারের জন্য আমরা পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এনে ব্যক্তি শ্রেণির আয়করের সীমা বর্তমান ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ টাকা করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে আয়করের সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি। আয়করের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ভারতে আয়করের সীমা ৫ লাখ রুপি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কর অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের মূল্য ও খরচ বৃদ্ধির কারণে সাধারণ ভোক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ সমস্যা নিরসনে এফবিসিসিআই উৎপাদনমুখী খাতসহ নিত্য ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরোক্ষ করে রেয়াত দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এ ধরনের শুল্ক ও কর রেয়াতের ব্যবস্থা নিয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি বিশেষ খাতে মূসক, আগাম কর, উৎসে কর, অগ্রিম কর ইত্যাদি সহ আমদানি শুল্কে রেয়াত দেওয়া হলেও সামগ্রিক শিল্প বাণিজ্য খাত এসব শুল্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে অসমতা দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে এফবিসিসিআইয়ের প্রাক বাজেট প্রস্তাবনাসমূহ পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান সংগঠনটির সভাপতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅর্থপাচারের কোনো তথ্য নেই: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
পরবর্তী নিবন্ধআমরা দেশের কল্যাণের জন্য দৌড়াচ্ছি : পরিকল্পনামন্ত্রী