নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে পাশাপাশি লেনদেনর গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নিয়ে টানা চার কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী অব্যাহত থাকে। গতকাল ব্যাংক খাতের ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টির, কমেছে তিন টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩টির, কমেছে তিনটির আর অপরিবর্তিত রয়েছে সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এছাড়াও বীমা খাতের ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ১৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটি কোম্পানির শেয়ারের। এই তিন খাতের সঙ্গে দাম বেড়েছে বড় মূলধনী ও দামি কোম্পানির শেয়ারেরও।
এবিষয়ে বাজারসশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১২২ অর্থবছর শেষ হতে যাচ্ছে, অনেক কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে; যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবেন। এই সময়টায় নতুন বিনিয়োগ আসে বাজারে।
নতুন অর্থবছরে নতুন পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করবেন বিনিয়োগকারীরা। যার কারণে এই সময়ে লেনদেন কিছুটা বাড়ে। কয়েক দিন পর এটা আরও বৃদ্ধি পাবে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ১১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে, লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা গড়ানোর আগেই ভারি হয় দরপতনের পাল্লা। এতে সূচকও নিচের দিকে নামতে থাকে। একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ঋণাত্মকও হয়ে পড়ে। অবশ্য লেনদেনের বেশিরভাগ সময় সূচক সামান্য ঊর্ধ্বমুখী থাকে। লেনদেন শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫ পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে হঠাৎ দরপতন থেকে বেরিয়ে আসে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। এতে লেনদেনের শেষ ১৫ মিনিটে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৭৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৬টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। বিপরীতে ৩৯টির দাম দিনের সর্বনিম্ন পরিমাণ কমেছে।
মূল্যসূচক বাড়ার পাশপাশি বাজারটিতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯৩৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়ছে ১৩২ কোটি ৫ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩০ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাহিনপুকুর সিরামিকস।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বেক্সিমকো লিঃ, শাইনপুকুর সিরামিকস, ফরচুন সুজ, স্কয়ার ফার্মা, অরিয়ন ফার্মা, তিতাস গ্যাস, ফু-ওয়াং ফুড, সোনালী পেপার ও স্যালভো কেমিক্যাল।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, নাভানা সিএনজি, আফতাব অটোস, ক্রাউন্ট সিমেন্ট, বাংলাদেশ ন্যশনাল ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, হামিদ ফেব্রিকস, আমরা টেওয়ার্ক ও রবি আজিয়াটা।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- গ্রামীণফোন লিঃ, জুট স্পিনার্স সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, মনোস্পুল পেপার, গ্লোবাল হেভী কেমিক্যাল, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, পেপার প্রসেসিং, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এসকে ট্রিমস ও নাহী অ্যালুমিনিয়াম। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ২৮ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৬টির এবং ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।