শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে। আগের কার্যদিবসের মতো গতকালও দর পতনের মধ্যে দিয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। পাশাপাশি একই সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন আর অধিকাংশ কোম্পানির দরও কমেছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থাহীনতার অভাব। সে কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কে পড়েছে। এই আতঙ্কের কারনে শেয়ার বিক্রির মহোৎসবে মেতেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ারবাজারে দর পতনের সঙ্গে লেনদেনের খরা হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ও সরকারি অফিস সময় কমানো বা হোম অফিসের ঘোষণা আসার পর শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হলো। বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। ডলার সংকটের সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এক বছরে সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করার পর রিজার্ভ নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমলেও এই মুহূর্তে লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে। অর্থাৎ রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে যে আয় হয়, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে পণ্য কিনে আনতে। এসব সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছে।

এবিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থাহীনতার অভাব। সে কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কে পড়েছে। পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনীতি পরিস্থিথি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চিন্তা ভাবনা আছে। সে কারনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছে। মির্জ্জা আজিজুল আরও বলেন, রিজার্ভ নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এমনিতে অর্থনৈতিক চাপের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ধরনের গুজব তৈরি হচ্ছে সে কারনে দরপত হচ্ছে।

এবিষয়ে জামান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, প্রতিদিনই ভাবি আজ হয়তো শেয়ারের দাম একটু বাড়বে। সকালের দিকে দাম একটু বাড়লেও দিন শেষে দরপতন হচ্ছে। প্রতিদিনই বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছি। আমি যে কয়টি শেয়ার কিনেছি, সবগুলোতে লোকসানে রয়েছি। এই লোকসান কোথায় গিয়ে থামবে কিছুই বুঝতে পারছি না। এভাবে বাজার পড়তে থাকলে সবার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলছি, সবাই হতাশার সুরে কথা বলছে।
গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দিনের সর্বনিম্ন দামে চলে গেছে। লেনদেনের প্রায় সময়জুড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। পৌনে তিনশ প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়ে বড় পতন হয়েছে সবকটি মূল্য সূচকের। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক প্রায় একশ পয়েন্ট পড়ে গেছে। ডিএসইর মতো মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) । এ বাজারটিতেও লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এর মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। ঈদের আগেও পতনের মধ্যে ছিল শেয়ারবাজার। ঈদের আগে শেষ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই পতন দিয়ে পার হয়। ফলে শেষ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আট কার্যদিবসই পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়।লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা।

প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই প্রায় একশ প্রতিষ্ঠানের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে দিনের সর্বনিম্ন দামে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির আদেশ দিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এরপরও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় দিনের লেনদেন শেষে মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫৮টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম কমার তালিকায় স্থান হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৭৫টির শেয়ার ও ইউনিট দিনের সর্বনিম্ন দামে লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির আদেশ আশায় লেনদেনের বেশিরভাগ সময় ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। মূল্য সূচক কমার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৯৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে বেশি লেনদেন হয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রামীণফোন, ওরিয়ন ইনফিউশন, কেডিএস, তিতাস গ্যাস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, ওরিয়ন ফার্মা এবং এইচ আর টেক্সটাইল। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৬১ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬০টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমঙ্গলবার থেকে এক ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং
পরবর্তী নিবন্ধ‘অস্ট্রেলিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকবে’