নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে হচ্ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এখন প্রক্রিয়া শেষে শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
রোববার (৩১ জুলাই) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) ‘সিএমজেএফ টক উইথ বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের এক্সপোজারের হিসাব বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন, আমি ছিলাম, গভর্নর উপস্থিত ছিলেন এ সংক্রান্ত বৈঠকে। আমরা আলাপ-আলোচনা করেই করেছি। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা প্রসিডিউর। আমাদের আলোচনা হয়েছে, হয়ে যাবে। আমরা তিনজনই একমত।
তিনি বলেন, এই গভর্নর যখন সচিব ছিলেন, তখন ফাইলটা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ওনার সুপারিশ নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকে ফাইল যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরের লেভেল ঠিক ছিল। কারণ ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন মিটিংয়ে। কিন্তু ওখানে (বাংলাদেশ ব্যাংক) যাওয়ার পর জুনিয়র অফিসার কেউ হয়তো নেগেটিভ দিয়ে ফাইলটা এমনভাবে করে ছিলেন, যাতে গভর্নর করতে পারেননি। যাই হোক নতুন গভর্নর আসার দুদিন পরই আমরা ওনার সঙ্গে দেখা করি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন জাস্ট এটা প্রসিডিউরে আছে।
বিষয়টি কি আইন দ্বারা করা হবে নাকি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দিয়ে করে দেবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইনে গেলে অনেক সময় লাগবে। ওনারা দ্রুত করার চেষ্টা করছেন। এটা নিয়ে নেগেটিভ কিছু নেই, সবই পজিটিভ। শুধু প্রসিডিউর ইস্যু।
ব্যাংকের এক্সপোজারে বন্ড অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, গভর্নর এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে বলে দিয়েছেন আমাদের সে বন্ডগুলো সিকিউর সেগুলোর সব এক্সপোজারের বাইরে থাকবে। কিন্তু সেটা যদি অ্যাসেট ব্যাক না হয়, ডিবেঞ্চার টাইপের হয় বা রিক্স টাইপের হয় তাহলে সেটা আর এক্সপোজারের বাইরে রাখা হবে না, ওটা এক্সপোজারের ভেতরে ঢুকে যাবে।
সম্প্রতি বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিএসইসির করা বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, মিটিংয়ের পর আমরা দেখলাম দুদিন মার্কেট ভালোই ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখলাম বাজার ফল করছে। আসলে আমাদের বাজারে তিন লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। তারা অনেক বেশি সেল করছে। দৈনিক ছয়শ থেকে আটশ কোটি টাকার মধ্যে যে লেনদেন হচ্ছিল, সেটা যারা কিনছিল তারা কুলিয়ে উঠতে পারছিল না, এত বেশি সেল প্রেশার আসছিল। এছাড়া কিছু নিউজ বা প্রশ্ন চলে আসে, যেগুলো মানুষ ভয় পেয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, পেট্রলের সমস্যা হতে পারে নিউজ আসার পর সবকিছুই মার্কেটে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সে কারণেই মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চর হয়েছিল। তাই সাময়িকভাবে এমন একটা পদক্ষেপ নিতে হয়েছে, যাতে বাজারে বড় ফল না হয়।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতে হয় না। যা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রফেশনাল লোকজন দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। যার ফলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। গত দুই বছরের বিশ্লেষণে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে দেখেছি। এ বছরও ভালো লভ্যাংশ দেবে বলে আশা করছি। তাই যারা বাজার সম্পর্কে ভালো বোঝেন না, তারা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
ফ্লোর প্রাইস নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরাও দর কমার ক্ষেত্রে দুই শতাংশ সার্কিট ব্রেকার এবং ফ্লোর প্রাইস দিতে চাই না। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্ষার জন্য দিতে বাধ্য হই। কারণ আমাদের দেশে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। উন্নত দেশে শিক্ষিত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমনটি করা লাগে না।
তিনি বলেন, শুধু ইক্যুইটি (শেয়ার ও ইউনিট) দিয়ে জিডিপির তুলনায় বাজারের আকার ধরে রাখা এবং ২০ শতাংশের বেশি করা সম্ভব না। যেসব দেশে জিডিপির তুলনায় শেয়ারবাজারের আকার তুলনামূলক বড়, সেসব দেশে ডেবট (বন্ড) মার্কেট দিয়ে বড় হয়েছে। আমাদের দেশেও বন্ডের লেনদেন শুরু হলে বাজারের আকার বড় হয়ে যাবে। তখন লেনদেনের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে।
রোডশোর সফলতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিদেশে টাকা আনতে যাই না। দেশকে ব্র্যান্ডিং করতে যাই। দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে যাই। এখন অনেকেই বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানে। যে কারণে অনেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগ করছেন।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, যারা এখনো দেয়নি, তাদের জরিমানাসহ আগামীতে দিতে হবে। এটা অনেকটা দৈনিক ভিত্তিতে সুদগণনার ন্যায় হবে। এ লক্ষ্যে গেজেট প্রকাশের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
আয়ের থেকে শাস্তি কম প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেক পুরাতন অভিযোগ দেখতে হচ্ছে। যা ১০ থেকে ১৫ বছর আগেরও আছে। তারপরও আমরা বিগত দুই বছরে যে পরিমাণ শাস্তি প্রদান করেছি, তা এর আগের ১০ বছরেও করা হয়নি। এর মধ্যে আবার করোনায় সবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দিকটিও বিবেচনা করতে হচ্ছে।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, ভালো কোম্পানি আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে সবাই চায় ভালো অ্যাকাউন্টস জমা দিয়ে আসতে। এ কারণে অনেকে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। হয়তো জুন ক্লোজিংয়ের হিসাবে কয়েকটি ভালো কোম্পানির আবেদন জমা পড়তে পারে। তবে আমরা যখন ভুয়া অ্যাকাউন্টস বুঝতে পারি, তখন সেসব আইপিও ফাইল বাতিল করে দেই।
এ সময় অনেক ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটি অনেকটা কোম্পানির পর্ষদের মানসিক সমস্যা। তারা ভাবে, কোম্পানি যেহেতু ভালো ব্যবসা করছে, সেহেতু শেয়ারবাজারে কেন যাবো। এছাড়া কোম্পানির মালিকানা অন্যদের হাতে ছাড়তে চায় না। এছাড়া এজিএমে অপমানিত হতে হবে ভেবেও আসতে চায় না।
সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।