নয় কার্যদিবস পর উত্থানে ফিরলো শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার টানা নয় কার্যদিবস দরপতনের পর সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার অবশেষে উত্থানে ফিরলো। রেগুলেটরা শেয়ারবাজারকে উত্থানে ফিরাতে নানামূখী উদ্যোগ নিলেও কাজে আসছিল না। তবে শেয়ারবাজারে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারের ক্যাপিটালে নজরদারি করার সিদ্ধান্তের পর শেয়ারবাজার উত্থানে ফিরেছে। গতকাল লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন দেখা দিলেও শেষপর্যন্ত মূল্যসূচক ও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছে লেনদেন। এর মাধ্যমে টানা নয় কার্যদিবস পতনের পর ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা পেলো শেয়ারবাজার। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনীতিতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগিয়ে চলছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এবিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, টানা নয় কার্যদিবস পর শেয়ারবাজারে সূচক বাড়া বাজারের জন্য ইতিবাচক। শাকিল রিজভী আরও বলেন, বাজার সামনে ঘুরে দাঁড়াবে ভয়ের কোন কারন নেই। বছরের বাজার কয়েক বার ফল্ট করে আবার ঠিক হয়ে যায়। কারণে শেয়ারবাজারে যে পতন হচ্ছে ততটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের শুরুতে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা না গড়াতেই প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

এতে আবারও বড় দরপতনের আশঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে দুপুর ১২টার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। দরপতনের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। সেই ক্রেতা সংকট থেকে বেরিয়ে আসে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। ফলে ঊর্ধ্বমুখী হয় সূচক।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঈদের পর থেকেই শেয়ারবাজার টানা দরপতন ঘটলেও সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সাশ্রয়ে লক্ষ্যে গত সোমবার সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। সরকারের পক্ষ এমন ঘোষণা আসার পর সোমবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। সেইসঙ্গে চরম ক্রেতা সংকটে পড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। মঙ্গলবারও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। পরের দুই কার্যদিবস বুধ ও বৃহস্পতিবার কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ফেরায় দরপতনের মাত্র কিছুটা কমে। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেয়ারবাজার। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আবারও ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই ক্রেতা সংকটে পড়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ফলে লেনদেন শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে পড়ে যায়। আর ক্রয়ে আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের। দরপতনের তালিকায় নাম লেখায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের।
এমন পরিস্থিতিতে দুপুর ১২টার পর হঠাৎ করেই ঘুরে যায় বাজার পরিস্থিতি। আর শেষ ঘণ্টার লেনদেনে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩১টির এবং ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮২ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।


মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৩৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৭০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজের ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মতিন স্পিনিং।

লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, কেডিএস এক্সেসোরিজ, মতিন স্পিনিং, তিতাস গ্যাস, সোনালি পেপার, এইচআর টেক্স, প্রাইম টেক্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, ফরচুন সুজ ও রবি এক্সিয়াটা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- মতিন স্পিনিং, জাহিন স্পিনিং, মুন্নু ফেব্রিকস, কেডিএস এক্সেসোরিজ, সাফকো স্পিনিং, গ্লোবাল হেভী, মেট্রো স্পিনিং, আরগন ডেনিমস, অ্যাপোলো ইস্পাত ও অলটেক্স ইন্ডাঃ।

দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- প্রগ্রেসিভ লাইফ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, নিউলাইন ক্লোথিং, মিরাকেল ইন্ডাঃ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, ইমাম বাটন, ইস্টার্ন কেবলস ও এফবিএফআইএফ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৪৬ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৯টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিম্ন-মধ্যবিত্তরা ফ্ল্যাট কিনতে ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন
পরবর্তী নিবন্ধবুধবার যেসব এলাকায় ব্যাংক বন্ধ