
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার টানা পতনের পর স্থিতিশীলতায় ফিরাতে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সূচকের বড় উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। একই সাথে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। এদিন একদিনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১৫৩ পয়েন্ট। আর ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৭৬৪ কোটি ৬৪ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ৮৭৭ কোটি ৭১ হাজার কোটি টাকা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ছিল ৪ লাখ ৯২ হাজার ১১৩ কোটি ৭ হাজার টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সের ১৫৩ পয়েন্ট উত্থান সূচককে ছয় হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে ৬ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে নিয়ে গেছে। আগের কর্মদিবস বৃহস্পতিবার সেটি গত ১৩ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নামার পর তৈরি হয় আতঙ্ক।
সেদিনই ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ২০২০ সালে দেশে করোনা সংক্রমণের পর ধসের মধ্যে ১৯ মার্চও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার ঘোষণা আসে। এতে বাজারের ধস থামে। গতকাল ফ্লোরের প্রথম দিন তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়। এর প্রভাবে লেনদেন শুরুই হয় ৬ হাজার ১৬ পয়েন্ট দিয়ে যা আগের দিনের তুলনায় ছিল ৩৬ পয়েন্ট বেশি। লেনদেনের অর্ধেক সময় সেখান থেকে সূচক আরও ৪০ পয়েন্টের মতো বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সূচক সব মিলিয়ে যখন ৭০ পয়েন্ট বেশি, সে সময় থেকে শুরু হয় ঊর্ধ্বমুখী টান। লেনদেন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত সূচক ১৬৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে সেখান থেকে ১০ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।
চলতি বছর এক দিনে সূচক সবচেয়ে বেশি ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছিল গত ৯ মার্চ। ১০০ পয়েন্ট যোগ হয়েছে আরও দুই দিন। এর মধ্যে ২৯ মে ১৩১ পয়েন্ট ও ২৩ মে ১১৮ পয়েন্ট সূচকে যোগ হতে দেখা যায়। এ ছাড়া ১৩ মার্চ বাড়ে ৯৭ পয়েন্ট।
বেলা শেষে বেড়েছে ৩৬২টি কোম্পানির দর। বিপরীতে কমেছে ৭টির আর ১১টি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে। হাতবদল হয়েছে মোট ৫৬৭ কোটি ৯৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার। আগের কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। ফ্লোর প্রাইস কার্যকরের দিন লেনদেন বেড়েছে ১২৬ কোটি ১৮ লাখ ১২ হাজার, যা শতকরা হিসাবে ২৮.৫৬ শতাংশ।
এর আগে, ঈদের পর শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই বৈঠকে বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও দরপতন বন্ধ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। শেষ পাঁচ কার্যদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় দাম প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বেঁধে দেওয়া হয়। এই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হয়েছে গতকাল রোববার থেকে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৩৬২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে সাতটির এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকেরও। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৩৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার কারণে একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন ১০ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। বাজার মূলধন বাড়ায় অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সিকিউরিটিজের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়ে গেছে। অবশ্য এর আগে টানা পতনে মাত্র ১৩ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলদন ২৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা কমে যায়।
মূল্যসূচকের বড় উত্থান হওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সসরিজের ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মতিন স্পিনিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, ইনট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, ফরচুন সুজ, স্কয়ার টেক্সটাইল, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার এবং শাইনপুকুর সিরামিকস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৭৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে চারটির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।