মিরসরাই প্রতিনিধি :
মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে উৎপাদন শুরু করেছে দুটি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের মার্চ থেকে জাপানের নিপ্পন-ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডাক্ট ও এপ্রিল থেকে এশিয়ান পেইন্টস উৎপাদন শুরু করেছে। আগামী বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ডের ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা এ শিল্পনগরীর নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। দেশের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশ সহনশীল গ্রিন অর্থনৈতিক অঞ্চল। এজন্য বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট (সিইটিপি), ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, ওয়েস্ট সোর্টিং ফ্যাসিলিটি, রুফটপ ও ফ্লোটিং সোলার স্থাপনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষরোপণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, এশিয়ান পেইন্টস ও ম্যাকডোনাল্ড স্টিল উৎপাদনে রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির উৎপাদিত পণ্য দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দুইশোর বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। এদের সঙ্গে ২২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। আরও বিনিয়োগ-শিল্পায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করেছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর।
শিল্পনগরে সরাসরি শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বেসরকারি উদ্যোগ এবং যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব অব্যাহত আছে। শিল্পোদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরা একক অথবা যৌথ উদ্যোগে টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, পাটজাত শিল্প, চামড়া শিল্প, রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও মেলামাইন, স্পোর্টস সামগ্রী, খেলনা, সাইকেল, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ওষুধ, মেডিকেল সামগ্রী, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, মোটরযান ও অটোমোবাইল, আইটি, বিভিন্ন সেবাখাতের পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের উপযোগী শিল্প-কারখানা স্থাপন করছে।
বিনিয়োগ আগ্রহ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জমি বরাদ্দ পেয়েছে, উত্তরা মোটরস, বার্জার পেইন্টস, বেইজিং ঝেনুয়ান হেংহুই ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টিং কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, বিএসএ ফ্যাশন লিমিটেড, হাংঝু ঝিনঝিয়াং গ্রুপ, ঝিন্দে ইলাস্টিক (বিডি), এক্সপোর্ট কম্পেটিটিভনেস ফর জবস, ইস্ট এশিয়ান কক্স, কমফিট কম্পোজিট নিট, ইওন মেটাল ইন্টারন্যাশনাল, ট্রেড ডিজাইন সল্যুশনস, ইয়নমেটাল লিমিটেড, ফন ইন্টারন্যাশনাল ও আরব বাংলাদেশ ফুডস লিমিটেড।
এছাড়া বরাদ্দ পেয়েছে গ্যাস ওয়ান লিমিটেড, অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেড, বিপি-পাওয়ারজেন লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, ইনট্রিগা অ্যাপারেলস লিমিটেড, হ্যামকো করপোরেশন লিমিটেড, যমুনা স্পেসটেক (জেভি) লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল মিলস লিমিটেড, চিটাগং পাওয়ারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক বোধাদিত্য মুখার্জি জানান, আমরা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কমার্শিয়াল সার্টিফিকেট পাই। আর সে মাসেই উৎপাদন শুরু করেছি। আমাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার টন। আমরা আশাবাদী শিগগির পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে পারব।
এদিকে জাপানের নিপ্পন স্টিল করপোরেশন ও বাংলাদেশের ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডক্টের যৌথ উদ্যোগে ১০ একর জমিতে ১১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগে স্টিল কারখানা স্থাপন করে। গত ২৫ জানুয়ারি তারা কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে।
ম্যাকডোনান্ড স্টিলের প্রজেক্ট ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৩ মার্চ বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে ২০ টন স্টিলের প্রথম চালান সরবরাহ করে ম্যাকডোনান্ড স্টিল। এরপর থেকে উৎপাদন অব্যাহত আছে। এ কারখানায় এমএস প্লেট তৈরি হচ্ছে।
এছাড়া ২০২৩ সালের মধ্যে উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা করছে সমুদা ফুডস, মডার্ন সিনটেক্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
বেজার তথ্য মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের ৩০ হাজার একর জমির মধ্যে প্রায় ৬ হাজার একর জমি শিল্পকারখানা গড়ে তোলার উপযোগী করা হচ্ছে। অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে এ ৬ হাজার একর জায়গাজুড়ে রাস্তা, ব্রিজ, বিদুৎ, গ্যাস সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ৫০০ একর জায়গায় গড়ে উঠছে গার্মেন্টস ভিলেজ। এক হাজার ১৫০ একর জমিতে গড়ে উঠছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়াও ৫০০ একর বসুন্ধরা গ্রুপকে এবং ৫০০ একর এসবিজি ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে চলেছে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ।
এছাড়া ৪০ একর জমিতে হেলথ কেয়ার, ১০০ একর জমিতে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ, ৪০ একর জমিতে এসকিউ ক্যাবল, ১০ একর জমিতে চীনের জিং জিয়ান, ২০ একর জমিতে মডার্ন সিনটেক্স এবং ১০০ একর জমিতে নিপ্পন ও ম্যাকডোনাল্ডসহ কয়েকটি কারখানার কাজ চলছে।
বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক কামরুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্বে পরিবেশ যখন দূষণের শেষ পর্যায়ে, তখন বিশ্বে বিভিন্ন উন্নত দেশ বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহার করছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা করছে অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আগামী বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশি ব্র্যান্ড নামে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আনবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে শিল্প-প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের গুরুত্ব অপরিসীম। যেসব অবকাঠামো এখনও অসম্পন্ন রয়েছে সেই যাবতীয় অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা জরুরি সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে জেগে উঠা হাজার হাজার একর পতিত জমিতে কিভাবে শিল্পায়ন করা যায় কিনা এজন্য আমি সর্বপ্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রোপাইল তৈরি করে দেখিয়েছি। সারা বাংলাদেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে তার চেয়ে বেশি জায়গা রয়েছে এ চরাঞ্চলে। এ শিল্পাঞ্চলে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।