নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে নিস্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা আবারও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে পাঁচ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে এর মধ্যে চার কার্যদিবসই উত্থান হয়েছে। এতে করে সপ্তাহটিতে শেয়ারবাজারের সব সূচকই বেড়েছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনি দর বেড়েছে। আর সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার উপরে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ উভয় শ্রেণির নিস্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হওয়ায় গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম এবং ডলারের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপে গত এক সপ্তাহে টানা পতনে ছিল শেয়ারবাজার। সেই চাপ কাটিয়ে বাজার ইউটার্ন নিয়েছে। নিস্ক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও মনের চাপ কমছে।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ০৮ হাজার ১০৯ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৩ টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ কোটি ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৯০৭ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন পাঁচ হাজার ১৩১ কোটি ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ টাকা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় হাজার ৯৩৩ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৩১২ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৮৩৮ কোটি ৭০ লাখ ৮৪ হাজার ১৩৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে চার হাজার ৯৫ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৪ টাকা বেশি হয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৩.৬৪ পয়েন্ট বা ১.৮২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৫৫.০৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৪.২৩ পয়েন্ট বা ১.৭৭ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪৭.৩০ পয়েন্ট বা ২.১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৯০.৬১ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৬৭.৩৫ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯১টির বা ৪৯.১০ শতাংশের, কমেছে ১১৪টির বা ২৯.৩১ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৪টির বা ২১.৫৯ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় ৪৭৭ কোটি ১১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার, যা মোট লেনদেনের ৬.৮৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৬৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ১৮৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফরচুন সুজ, মালেক স্পিনিং ও ইস্টার্ন হাউজিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৮১ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫৮ কোটি ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮২ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১০৯ কোটি ৮০ লাখ ৬২ হাজার ৫৯৯ টাকা বেড়েছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭৩.০৪ পয়েন্ট বা ১.৪৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৪২.৯৬ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ১৬৬.২১ পয়েন্ট বা ১.৫১ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ৭৫.৬১ পয়েন্ট বা ০.৫৬ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ১৭.৯২ পয়েন্ট বা ১.৩৪ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ২১.৮২ পয়েন্ট বা ১.৮৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১৭২.১৬ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪২৭.৭২ পয়েন্টে, এক হাজার ৩৫৬.৭৯ পয়েন্টে এবং এক হাজার ১৯০.৫২ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৬৫টির বা ৪৭.০১ শতাংশের দর বেড়েছে, ১০৩টির বা ২৯.৩৪ শতাংশের কমেছে এবং ৮৩টির বা ২৩.৬৫ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।