ব্যাংক-বীমা খাতের শেয়ারের দাম কমলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রকৌশল- আর্থিক খাতের

মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে চার কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমূখী অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলো। আর শেষ ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা পেলো শেয়ারবাজার।
এদিন ব্যাংক-বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রকৌশল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ারের দর। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, শেয়ারবাজারে পালে হাওয়া লেগেছে। সর্বশেষ চার কর্মদিবসেই লেনদেন হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার উপরে। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, সূচক ও লেনদেনে বাজার চাঙা হয়ে উঠার বিষয়টি দিনে দিনে আরও স্পষ্ট হচ্ছে। বাজারের এই সুবাতাসে বিনিয়োগকারীরা নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন বলে তাঁরা মনে করছেন।

এর আগে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি এবং ডলারের রেকর্ড দর হাঁকানোর ধাক্কায় ৭-১১ আগস্ট সপ্তাহে শেয়ারবাজারের সূচক উধাও হয়েছিল ১৬৩ পয়েন্ট। পাশাপাশি লেনদেনও নেমে গিয়েছিল পাঁচশ’কোটির ঘরে।

এরপর বিএসইসির ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় এবং ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যে গণনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার আসে। কিন্তু তারপরও পতন অব্যাহত থাকায় বিস্ময়ের পাশাপাশি হতাশ হয়েছিল বিনিয়োগকারীরা।

তারপর ২১-২৫ আগস্ট সপ্তাহে সুচক ও লেনদেনে গতি ফিরতে শুরু করে। এই সময়ে টানা উত্থানে সূচক বেড়েছে ১৬৭ পয়েন্ট। মাঝখানে বুধবার সূচকের পতন হয় ৩৫ পয়েন্ট। পরেরদিন বৃহস্পতিবার সূচক বাড়ে দ্বিগুণেরও বেশি, ৭৫ পয়েন্ট। তারপর রোববার থেকে সূচক আরও পজিটিভ অবস্থায় দেখা যায়। তবে এই সময়ে লেনদেনে নতুন করে আলো ছড়াতে শুরু করে। প্রতিদিন লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেন একুশ’শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গত এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার মাইলফলক সৃষ্টি করে।
গতকাল ডিএসই এবং সিএসইতে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের শেষেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয়। ফেলে সবকটি সূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিরটের দাম বাড়ায় লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর লেনদেনের ২৩ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৩২ পয়েন্ট। এ পর্যায়ে এসে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। ফলে কমে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। আর এর ফলে লেনদেনের ৪২ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৪ পয়েন্ট বাড়ে। তবে, এরপর আবার বাড়ে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং লেনদেনের শেষপর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। সেইসঙ্গে বড় হয় দাম বাড়ার তালিকা। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৩টির। আর ৭৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪৩২ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৭৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৯২ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৭৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মালেক স্পিনিং।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, অরিয়ন ফার্মা, মালেক স্পিনিং, বিএসসি, ইস্টার্ন হাউজিং, লাফার্জহোলসিম, বিবিএস, আলিফ ম্যানুফেচারিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ফরচুন সুজ।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ইস্টার্ন হাউজিং, এডভেন্ট ফার্মা, ন্যাশনাল হাউজিং, প্যাসিফিক ডেনিমস, অ্যাপেক্স ফুড, অরিয়ন ইনফিউশন, অ্যাপেক্স স্পিনিং, আলিফ ম্যানুফেচারিং, ন্যাশনাল টি ও ইন্দো-বাংলা ফার্মা।

দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- মনোস্পুল পেপার, ফার্মা এইডস, পেপার প্রসেসিং, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, নাহী অ্যালুমিনিয়াম, রহিমা ফুড, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, জেএমআই সিরিঞ্জ ও প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৩০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৩টির এবং ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ থাকলেও সংকট নেই : ড. দেবপ্রিয়
পরবর্তী নিবন্ধজ্বালানির দাম কমেছে, দ্রব্যমূল্যও কমানো উচিত: এফবিসিসিআই সভাপতি