নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার আগের সপ্তাহে টানা উত্থান হলেও চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসই দর পতন হয়েছে। আগের কার্যদিবসের চেয়ে বুধবার আরো বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। শেয়ারবাজারের সব সূচকই কমেছে। একই সঙ্গে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পর থেকে আবারও দরপতনের কবলে শেয়ারবাজারর। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকেছে গেছে। পাশাপাশি ডলারের বাজার প্রতিনিয়তই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ কারণে ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাতে আবারও শেয়ারবাজারে বড় দর পতনের কবলে পড়েছে। এর আগে গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেল কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রলের দাম বাড়ায় সরকার। এ পরিস্থিতিতে পর থেকে বেশ অস্থিরতার মধ্যদিয়ে পার করে শেয়ারবাজার। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪৩টি ছিল ক্রেতাশূন্য। পাশাপাশি লেনদেন হওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় অর্ধশতাধিক কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে গেছে। আর তাতে এসব কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচাও কমেছে। সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেন হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ৭০০ কোটি টাকার গড়ে নেমে এসেছে। এদিকে এক যুগ যাবত শেয়ারবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যে গণনার দাবি চলছিল। শেয়ারবাজারের সব পক্ষই বলছিল, এই দাবি পূরণ হলেই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। স্থিতিশীলতার পথে শেয়ারবাজার অগ্রসর হবে। কিন্তু দাবি পূরণের ঘোষণা আসার পরেও শেয়ারবাজার হাঁটছে উল্টো পথেই।
শেয়ারবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যে গণনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আসার পর টানা তিন কর্মদিবস যাবাত দরপতন চলছে শেয়ারবাজারে। এর মধ্যে রোববার ৮ পয়েন্ট, সোমবার ৪৫ পতনের পর মঙ্গলবার আশুরার ছুটি শেষে গতকাল বুধবার আরও ৭৮ পয়েন্ট কমেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। অর্থাৎ তিন কার্যদিবসে ১৩১ পয়েন্ট হারাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক।
অথচ প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর এক্সপোজার লিমিট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর আগের সপ্তাহে টানা পাঁচ কার্যদিবসে সূচক বেড়েছিল ৩৩১ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে লেনদেনেও মিলেছিল ঊর্ধ্বগতি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে জানায়, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনার ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য ধরা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর আশা করা হচ্ছিল, এবার বাজারে বিক্রয়চাপ কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু সার্কুলার জারি হলেও বাজারে এর কোন প্রভাবই দেখা গেল না। বরং বাজার উল্টোপথেই দৌড় দিচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেল এবং ডলারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি-এই দুই ইস্যুর আগুনে এক যুগের দাবি পূরণ ছাই হয়ে গেল।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দামের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৮.০৪ পয়েন্ট বা ১.২৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৮০.৯০ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৩.৮১ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৬.৬৪ পয়েন্ট বা ১.১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৫৪.৪২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২১০.৯৫ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৯৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস হতে ২৮৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টির বা ৬.৮৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৭৯টির বা ৭৩.৬১ শতাংশের এবং ৭৪টির বা ১৯.৫৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২৩০.৫০ পয়েন্ট বা ১.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২০৭.৯০ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৪টির, কমেছে ১৯১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৯টির দর। সিএসইতে ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।