X
টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহ বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখীতার মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচকও। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। এর আগে তিন সপ্তাহের টানা পতনে ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন কমে যায়।
টানা পতনের মধ্যে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়া এবং পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্য বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সম্মতি।
শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হতে থাকলে গত ২৮ জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যা কার্যকর হয় গত রোববার থেকে। এতে দাম সমন্বয় করায় রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। আর লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এতে টানা পতন থেকে বেরিয়ে একদিনেই ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ১৫৩ পয়েন্ট।
আর সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেনের শেষদিকে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। এতে একদিকে লেনদেনের গতি বাড়ে, অন্যদিকে সূচকের বড় উত্থান হয়।
অবশ্য মঙ্গলবার রাতেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের গতি। ফলে ডিএসইতে প্রায় তিনমাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটে।
আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও লেনদেনের শেষদিকে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের তথ্য চলে আসে। ফলে সবকটি মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। এতে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে।
এতে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৯২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আগের তিন সপ্তাহের টানা পতনে বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে সাতটির। আর আটটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ১১৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫৫ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর বেড়েছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহে এ সূচকটি বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
সবকটি সূচকের উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৭৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বা ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার ১৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৮৮৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। ১৫১ কোটি ৭৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী পেপার।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে মালেক স্পিনিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ওরিয়ন ফাইন্যান্স, মতিন স্পিনিং এবং কেডিএস এক্সসোসরিজ।