নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার আগের সপ্তাহে ২১ হাজার কোটি টাকার মূলধন ফিরলেও গত সপ্তাহে ১০ হাজার কোটি টাকার মুলধন হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহটিতে শেয়ারবাজারের সব সূচকই কমেছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দরও কমেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কোটি ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ০৫৪ টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ০৩ হাজার ২৬৬ কোটি ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৭৪২ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ১০ হাজার ২১০ কোটি ৯৯ লাখ ২২ হাজার ৩১২ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তিন হাজার ৫৮৪ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার ৯৯২ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ০৭৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে এক হাজার ৪৭৪ কোটি ৫৯ লাখ ০২ হাজার ০৮৬ টাকা কম হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬৩.৪৮ পয়েন্ট বা ২.৫৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৪৮.৭৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৯.৪৭ পয়েন্ট বা ২.১৪ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭০.৮১ পয়েন্ট বা ৩.১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৫.৭২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৯৪.৩৯ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির বা ১০.৬২ শতাংশের, কমেছে ২৮৭টির বা ৭৪.৩৫ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৮টির বা ১৫.০৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯৯ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯০ কোটি ৫৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪২ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১৬ কোটি ৩৩ লাখ ০৯ হাজার ২৪৩ টাকা কমেছে।
সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪১৩.২৫ পয়েন্ট বা ২.২২৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১২৭.৬৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ২৩৯.৭৮ পয়েন্ট বা ২.২৪ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ২৬১.৬১ পয়েন্ট বা ১.৯৩ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ৩৫.৫৩ পয়েন্ট বা ২.৬১ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ২০.৪৯ পয়েন্ট বা ১.৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০ হাজার ৮৫৯.৮৯ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২৬৩.২৯ পয়েন্টে, এক হাজার ৩২৫.৪৪ পয়েন্টে এবং এক হাজার ১৪৮.৮৯ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩২৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫২টির বা ১৫.৮৫ শতাংশের দর বেড়েছে, ২১৯টির বা ৬৬.৭৭ শতাংশের কমেছে এবং ৫৭টির বা ১৭.৩৮ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পর থেকে শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকেছে গেছে। পাশাপাশি ডলারের বাজার প্রতিনিয়তই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ কারণে ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এর আগে গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেল কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রলের দাম বাড়ায় সরকার। এ পরিস্থিতিতে পর থেকে বেশ অস্থিরতার মধ্যদিয়ে পার করে শেয়ারবাজার। অথচ প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর এক্সপোজার লিমিট নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর আগের সপ্তাহে টানা পাঁচ কার্যদিবসে সূচক বেড়েছিল ৩৩১ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে লেনদেনেও মিলেছিল ঊর্ধ্বগতি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে জানায়, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনার ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য ধরা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার জারির পর আশা করা হচ্ছিল, এবার বাজারে বিক্রয়চাপ কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে। কিন্তু সার্কুলার জারি হলেও বাজারে এর কোন প্রভাবই দেখা গেল না। বরং বাজার উল্টোপথেই দৌড় দিচ্ছে।