অর্থনীতি ডেস্ক : টানা দরপতনের পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা উত্থান প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলো।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দামের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে।
এতে ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত টানা পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমূখী থাকে। টানা পাঁচ কার্যদিবসের উত্থানে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৩৩১ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন বাড়ে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে আসা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৪ আগস্ট বিকেলে ব্যাংকের এক্সপোজার নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোম্পানির শেয়ার ধারণের হিসাবায়নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রয় মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শেয়ারবাজারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সুখবর দিলেও পরের দিন শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই দরপতন হয় শেয়ারবাজারে। ফলে এক সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক কমে ১৬৩ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন কমে ১০ হাজার ২১১ কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার পুঁজিবাজারের জন্য আরও একটি সুখবর দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং পুঁজিবাজারে অন্যান্য নিদর্শনপত্রে বিনিয়োগ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্য বিবেচনা করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের কারণে টানা পতন থেকে বেরিয়ে রোববার শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরে। ১৫ আগস্টের ছুটির কারণে সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকে। আর মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
দুই কার্যদিবসের টানা ঊর্ধ্বমুখীতার পর বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার আভাস পাওয়া যায়।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার কারণে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিক্রির চাপ বাড়ালে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা কমে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩২টির এবং ৯২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকো। এই সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৮১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ৫৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, কেডিএস এক্সেসরিজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টির এবং ৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।