ডিএসইতে ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা কাটিয়ে পালে হাওয়া লেগেছে। টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার উত্থানে মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১০৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার। এর আগে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নাই। দেশের আর্থনীতি অবস্থায় বেশ ভালো সে জন্য শেয়ারবাজার ভালো হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ উভয় শ্রেণির নিস্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হওয়ায় শেয়ারবাজারে পালে হাওয়া লেগেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা কেটে যাচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এবং ডলারের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপে এর আগে গত এক সপ্তাহে টানা পতনে ছিল শেয়ারবাজার। সেই চাপ কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে এসেছে। এটা বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক-বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় চাঙা হচ্ছে শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীরা আস্থায় ফিরছেন। ফলে লেনদেনও দ্বিগুণ হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রোববার ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫টির, অপরিবর্তিত ছিল ৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। একইভাবে বিমা খাতের ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৪টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিরটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ফলে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষদিকে বিক্রির চাপ বাড়ায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। এতে কমে মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও ছোট হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০২টির। আর ৬১টির দাম অপরিবর্তিত। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৪০১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩২৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে।

শুধু চলতি বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন নয়, এদিন ডিএসইতে ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর ডিএসইতে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত ১১ মাসে ডিএসইতে আর এতো লেনদেন হয়নি।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ১১৪ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ১০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৮ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ইস্টার্ণ হাউজিং, ম্যাকসন স্পিনিং, কপারটেক এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ৩১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৬টির এবং ৫৬টির দাম অপরিবর্তিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছে জনতা ব্যাংক লিমিটেড
পরবর্তী নিবন্ধ২৫ দিনে রেমিট্যান্স এলো সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা