নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার আগের দিনের ধারাবাহিকতায় সোমবারও সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে দুই কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক নিম্নমুখী অব্যাহত রয়েছে। গতকাল অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে পাশাপাশি লেনদেনও সূচক কমেছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে ২১১ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। এদিকে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দূর করতে গত ২৮ জুলাই শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর টানা ৫ কার্যদিবস উত্থান হলেও রোববারের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও পতন হয়েছে। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের ফের বড় দরপতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
এর আগে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দামের সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে।
এতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। টানা পাঁচ কার্যদিবসের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৩৩১ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন বাড়ে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হলেও চলতি সপ্তাহের শুরুটা শেয়ারবাজারের জন্য ভালো হয়নি। যদিও সপ্তাহের শুরু হওয়ার আগেই শেয়ারবাজারের জন্য বড় সুখবর দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে আসা দাবির প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্যাংকের এক্সপোজার নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোম্পানির শেয়ার ধারনের হিসাবায়নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রয়মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শেয়ারবাজারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সুখবর দিলেও শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেল কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রলের দাম বাড়ায় সরকার। এ পরিস্থিতিতে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস বেশ অস্থিরতার মধ্যদিয়ে পার করে শেয়ারবাজার এবং দরপতন হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা যায়। লেনদেনের শুরুরদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও, শেষদিকে বিক্রির চাপ বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। ফলে সূচকের বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১১টির এবং ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। এই সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। মূল্যসূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। তবে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ওপরে রয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ১১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৮০ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মালেক স্পিনিংয়ের ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কপারটেক। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, সি পাল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, ম্যাকসন স্পিনিং, একমি পেস্টিসাইড এবং ওরিয়ন ইনফিউশন। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৪টির এবং ৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।