নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে চার কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী অব্যাহত রয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। তবে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে সিমেন্ট ও খাদ্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। এর পাশাপাশি ওষুধ, বস্ত্র, প্রকৌশল এবং বীদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে ভূমিকা রেখেছে। এই খাতগুলোতে যে কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে, বেড়েছে তার থেকে বেশি। অন্যদিকে সব থেকে বেশি দরপতন হয়েছে বীমা খাতে। এ খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দরপতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম আধঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইতে ৫৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। ফলে লেনদেনের শুরুর দিকে সূচকের বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় হয় দরপতনের তালিকা। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেন শুরুর ৩৩ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ২৩ পয়েন্ট। এ পরিস্থিতিতে দর হারাতে থাকে একের পর এক বীমা কোম্পানি। বীমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অন্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও দরপতনের তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় বেলা ১১টা ১৮ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য এরপর আবার ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার। এ পর্যায়ে বাজার ঘোরাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সিমেন্ট ও খাদ্য খাতের কোম্পানিগুলো। পতনের মধ্যে এই দুই খাতের প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। পরে ওষুধ, বস্ত্র, প্রকৌশল এবং বীদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে থাকে। ফলে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ১৪৩টির। আর ১০২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে সিমেন্ট খাতের ৫টির শেয়ার দাম বাড়ার বীপরীতে দাম কমেছে একটির। আর খাদ্য খাতের ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বীপরীতে কমেছে ৪টির। এছাড়া বস্ত্র খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ১৯টির। ওষুধ খাতের ১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে, বীপরীতে দাম কমেছে ১৩টির। প্রকৌশল খাতের ১৯টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং কমেছে ১৪টির। বীদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে এবং কমেছে ৯টির। আর ৮টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার বীপরীতে দাম কমেছে ৭টির।
অপরদিকে সব থেকে বেশি দরপতন হয়েছে বীমা খাতের। এই খাতের ১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বীপরীতে কমেছে ৩১টির। এছাড়া ব্যাংক খাতের ৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ১০টির দাম কমেছে। আর্থিক খাতের ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বীপরীতে দাম কমেছে ১০টির। এতে দিনের লেনদেশ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১০১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, বিএসসি, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, মালেক স্পিনিং, অরিয়ন ইনফিউশন, মুন্নু ফেব্রিকস, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, সাইফ পাওয়ার, ইস্টার্ন হাউজিং ও অরিয়ন ফার্মা।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- মুন্নু ফেব্রিকস, মেট্রো স্পিনিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, রহিমা ফুড, অরিয়ন ইনফিউশন, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি ল্যাম্পস, এএমসিএল (প্রান) ও ইনফর্মেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বিআইএফসি, বিডি থাই, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, হাওয়া ওয়েল টেক্সটাইল, সি এন্ড এ টেক্সটাইল, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম টেক্সটাইল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বীক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০১টির দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ১১১টির এবং ৮৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।