নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন, সংগ্রামের অনুপ্রেরণাদানকারী, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পান খেতে পছন্দ করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটে তিনি শহীদ হন।
স্বাধীনতা ইতিহাসের এ মহিয়সী নারীর স্মরণে রত্মাগর্ভা আম্বিয়া আক্তারকে পানের বাটা উপহার দিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক।
এভাবে সম্মাননা ও উপহার প্রদান, বৃক্ষরোপন কর্মসূচিসহ ১৫ ধরনের কাজের মাধ্যমে ১৫ আগস্টে শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৫ সদস্যকে বিশেষভাবে স্বরণ করেছে এনআরবিসি ব্যাংক।
এছাড়া ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৫টি করে নতুন হিসাব, ১৫ লাখ ঋণ বিতরণ এবং ১৫ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে। ‘শোক নয় শক্তি’ এই স্লোগানে এসব কর্মসূচি পালন করে কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব শাখার আওতাধীন ১৫টি শাখা-উপশাখা।
বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে গত বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ শাখা প্রাঙ্গনে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তি সম্মাননা ও পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান।
ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রাশিয়ার সাধারণ সম্পাদক এস এম পারভেজ তমাল, ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রাশিয়ার সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু, শেযারহোল্ডার মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া, এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম আউলিয়াসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শহিদ হওয়ার মুহূর্তে পরিহিত পোশাকের স্বরণে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট জিল্লুর রহমানকে সাদা গেঞ্জি, পাঞ্জাবি এবং চেক লুঙ্গি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সৈয়দ আমিনুল হক এতিমখানায় বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাবস্থায় তার পছন্দের মুড়িমাখানোর সংশ্লিস্ট খাবার দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ছিল লাল ও নীল রঙের দুটি সাইকেল। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শেখ রাসেলের স্মরণে ১১ বছরের শিশু এস এম জুবায়েরকে একটি লাল রঙের সাইকেল দেওয়া হয়। বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের স্বরণে তাড়াইল ফুটবল একাডেমিকে ক্রীড়া সরঞ্জাম দেওয়া হয়। শেখ জামাল ক্রিকেট খেলতে এবং ভালো গিটার বাজাতে পারতেন। তাঁর স্বরণে মেধাবী ছাত্র অবনী সরকারের হাতে গিটার তুলে দেওয়া হয়।
এথলেটিক্সসহ বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রে রেকর্ডসহ স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত ছিলেন সুলতানা কামাল খুকু। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের স্ত্রী। তার স্মরণে অ্যাথলেট জুনাইদ হাসানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়া, বিয়ের মাত্র ২৯ দিনের মাথায় ঘাতকের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হন পারভীন জামাল খুকু। শেখ জামালের স্ত্রী পারভীন জামাল রোজী স্মরণে নববধূ মনিরা আক্তারের নিকট উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়।
শেখ আবু নাসের। বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই। অতিথিপরায়ণ ও বন্ধুবৎসল হিসেবে তার সুনাম আছে। তার স্বরণে বাজিতপুরে রেলস্টেশনের অতিথিকক্ষে অবস্থান করা যাত্রীদের আপ্যায়ন করা হয়। একজন সফল ও শক্তিশালী যুব সংগঠক ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি। তিনি যুবলীগ ও বাংলার বাণী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মহান এই সংগঠকের স্বরণে দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ঘাতকের বুলেটে শহীদ হওয়ার সময় বেগম আরজু মণি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বরণে কৃষক জালাল মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চয়ানা বেগমকে বিশেষ উপহার পাঠানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও সেজো বোনের স্বামী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী। তার স্বরণে নিকলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ১৫ জাতের চারা গাছ উপহার দেওয়া হয়।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া আরিফ সেরনিয়াবাতের স্বরণে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. মিন খাতুনকে নতুন ছাতা ও স্কুল ব্যাগ উপহার দেয়া হয়। নবম শ্রেণি পড়ুয়া বেবি সেরনিয়াবাত স্বরণে সৈয়দুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার নবম শেণির শিক্ষার্থী মোছা: রোকেয়া আক্তারকে নতুন জামা উপহার দেয়া হয়।
আইনজীবী ও সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত স্বরণে বাংলাদেশ আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান আনসারীকে সম্মাননা জানানো হয়। ঘাতকের বুলেটে ঝাঝরা হয়ে যায় চার বছর বয়সী আবুল হাসনাত আব্দুলাহর জেষ্ঠ্যপুত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবুর বুক। তার স্মরণে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আপন সেনকে একসেট খেলার সামগ্রী দেওয়া হয়।
এছাড়া ব্যাংকের সব কর্মকর্তাবৃন্দ সত্তরের দশকের শুদ্ধতম সময়কে ধারণ করে সাদা পাঞ্জাবী, পাজামা ও বঙ্গবন্ধুর কালো চশমার সাথে মিল রেখে কালো ফ্রেমের চশমা পরিধান করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট জিল্লর রহমান বলেন, এ ধরণের আয়োজন নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরবে। ব্যাংকিং সেবার বাইরে শোকাবহ দিবসে এনআরবিসি ব্যাংকের এমন আয়োজন সবাই অনুসরণ করতে পারে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন দেশ,দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। তিনি চেয়েছিলেন স্বনির্ভর অর্থনীতি। ঘাতকেরা তাঁকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দেয়া হবে। এনআরবিসি ব্যাংক গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ণ করে চলেছে।
ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ উন্নয়নের সকল সূচকে আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতির পিতা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে, তাহলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিরাপদ হবে।
ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হত না। আমাদের দুর্ভাগ্য তাকে অকালে মৃত্যুর মুখে ফেলেছেন কতিপয় সেনা সদস্য। বঙ্গবন্ধুর শোক স্মরণে এনআরবিসি ব্যাংকের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। এই আয়োজন নতুন প্রজন্ম সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যদের সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবেন।