শেয়ারবাজারে ‘মার্কেট মেকার’ সনদ চায় সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংস

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দিতে বাজার সৃষ্টিকারী বা মার্কেট মেকার হতে চায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস।

এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে বাজার সৃষ্টিকারী করার পক্ষে মত দিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। ডিএসই’র অভিমত মোনার্ক হোল্ডিংসের বাজার সৃষ্টিকারী হিসেবে কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে। এমন অভিমত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বাজার সৃষ্টিকারীর সনদ দিতে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে সুপারিশও করেছে ডিএসই।

ডিএসই থেকে বিএসইসিকে পাঠানো এক সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএসই মনে করে সার্বিকদিক বিবেচনায় মোনার্ক হোল্ডিংসের বাজার সৃষ্টিকারী হিসেবে কাজ করার সক্ষমতা রয়েছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির বাজার সৃষ্টিকারী আবেদন বিবেচনা করা যেতে পারে।

এতে বলা হয়, মোনার্ক হোল্ডিংস ডিএসইর সদস্যভুক্ত স্টেকহোল্ডার (ট্রেক নম্বর- ২৫২)। চলতি বছরের ৮ মে প্রতিষ্ঠানটি ডিএসইতে মার্কেট মেকারের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জানিয়েছে। ওই আবেদনের ভিত্তিতে ডিএসই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্কেট মেকার) বিধিমালা, ২০১৭ এর প্রয়োজনীয় সব শর্তপূরণ করেছে কিনা তা যাচাই করে দেখেছে।

বিএসইসির কাছে ডিএসই এমন সুপারিশ করার আগে বাজার সৃষ্টিকারীর সনদ চেয়ে মোনার্ক হোল্ডিংসের পক্ষ থেকে ডিএসইতে একটি আবেদন করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী সাদিয়া হাসান সই করা ওই আবেদনে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদসভায় সর্বসম্মতিতে মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্কেট মেকার) বিধিমালা, ২০১৭ এর সব শর্ত পরিচালন করে নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য একটি রেজুলেশন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মার্কেট মেকারের নিবন্ধন সনদ পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফরম্যাটে (শিডিউল-ফর্ম-ক) অনুযায়ী মোনার্ক হোল্ডিংসের পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে আবেদন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, এরই মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজ বি রিচ লিমিটেড এবং গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ বাজার সৃষ্টিকারীর সনদ পেয়েছে। এছাড়া বাজার সৃষ্টিকারী হতে আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড (আইএসটিসিএল) এবং সোহেল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের আবেদন বিএসইসিতে রয়েছে।

বিএসইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজার সৃষ্টিকারী হতে মোনার্ক হোল্ডিংসের আবেদন যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতিষ্ঠানটি বাজার সৃষ্টিকারীর সনদ পাবে।

দুঃসময় বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বাজার সৃষ্টিকারী) বিধিমালা, ২০১৭ করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ বিধিমালা অনুযায়ী, মার্চেন্ট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার বিএসইসি থেকে বাজার সৃষ্টিকারীর সনদ পাওয়ার যোগ্য হবে। বাজার সৃষ্টিকারী হতে প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা থাকতে হবে। আর বাজার সৃষ্টিকারী হতে স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন সাপেক্ষে বিএসইসির কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আবেদন করবে।

এতে আরও বলা হয়, নিবন্ধন সনদ পাওয়া বাজার সৃষ্টিকারীরা সর্বোচ্চ সততা, বিশ্বস্ততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাজার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রত্যেকে এক বছরের জন্য সনদ পাবে এবং তাদের সব হিসাব ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। অনুমোদিত বাজার সৃষ্টিকারী সিকিউরিটির বা শেয়ারের তারল্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং বাজারের আচরণের ওপর তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করবে।

সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংসকে গত বছর ট্রেক সনদ দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ট্রেক হলো শেয়ারবাজারে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের লেনদেন করবেন। এ হিসেবে ট্রাক অনেকটাই ব্রোকার হাউজের মতো। তবে ট্রেকের মালিকরা ব্রোকারেজ হাউজের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার পাবে না।

মোনার্ক হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসান। গত বছর ডিএসইতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মোনার্ক হোল্ডিংসকে ট্রেক সনদ দেওয়া হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম কাছ থেকে সেই সনদ নেন কাজী সাদিয়া।

সম্প্রতি শেয়ার কারসাজিতে নাম উঠেছে কাজী সাদিয়ার। এমনকি সাকিব এবং মোনার্ক হোল্ডিংসের বিরুদ্ধেও কারসাজির গুঞ্জন ছড়ায়। তবে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, যখন কোনো সিকিউরিটিজ নিয়ে তদন্ত করা হয়, তখন বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন তদন্তকারী দল। সেখানে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যাদের নাম থাকে সবাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না।

তিনি বলেন, তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়, তাদের শুনানিতে ডাকা হয়। সেইসঙ্গে অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়, জরিমানা করা হয়। সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে শেয়ার নিয়ে কোনো অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়নি এবং তাকে বিএসইসি থেকে কোনো ধরনের জরিমানা করা হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের সুদের হার বাড়াচ্ছে ভারত
পরবর্তী নিবন্ধনৌকাডুবি: আরও ৮ মরদেহ উদ্ধার, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩