নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের মতো গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসও সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা ৬ কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজার উত্থান হয়েছে। এদিন উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচকই বেড়েছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দরও বেড়েছে। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা কমলেও ১৯ শত কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলো। আর শেষ ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে ১২ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো। শেয়ারবাজারে এমন টাানা উত্থান প্রবণতা দেখা দেওয়ায় সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স। এর ফলে সূচকটি প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নাই। দেশের আর্থনীতি অবস্থায় বেশ ভালো সে জন্য শেয়ারবাজার ভালো হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হওয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেনের পালে হাওয়া লেগেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা কেটে গেছে তারা এখন শেয়ারবাজার মুখি হচ্ছে। তাই শেয়ারবাজার চাঙ্গা হচ্ছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ডিএসই এবং সিএসইতে লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের শেষেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয়। ফলে সবকয়টি সূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিরটের দাম বাড়ায় লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে শেষ পর্যন্ত। এর ফলে লেনদেনের শেষদিকে এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাড়ে। ফলে সবকয়টি সূচকের বড় উত্থান দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩১টির। আর ৭৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫০৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১২ মে’র পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসলো। গত ১২ মে ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৫৬৫ পয়েন্ট। এরপর বৃহস্পতিবারের আগে ডিএসইএক্স আর সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করে পারেনি।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩০৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের দিনের হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১১৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৫৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, ইস্টার্ন হাউজিং লিঃ, অরিয়ন ইনফিউশন, অরিয়ন ফার্মা, ন্যাশনাল পলিমার, লাফার্জ হোলসিম, ফরচুন সুজ, জেএমআই হাসপাতাল, বিএসসি ও সাইফ পাওয়ার।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জেএমআই হাসপাতাল, ইস্টার্ন হাউজিং লিঃ, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, মেট্রো স্পিনিং,আরএসআরএম স্টিল, মনোস্পুল পেপার, জেমিনী সী ফুড, সোনালি আঁশ, কোহিনুর কেমিক্যাল ও পেপার প্রসেসিং।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বীচ্ হ্যাচারী, নাহি এ্যালুমিনিয়াম, নূরানী ডাইয়িং, এনটিসি, আমান ফীড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, সুহৃদ ইন্ডাঃ, ডেল্টপা স্পিনিং, কুইনসাউথ টেক্সটাইল ও ফার কেমিক্যাল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৫০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৬টির এবং ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।