ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে ঘুস দেওয়া ‘স্বাভাবিক প্রথা’ হয়ে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের (এসএমই) উদ্যোক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি অপ্রিয় চরম সত্যে রূপান্তরিত হয়েছে, যা সমাজ থেকে সহজে নির্মূল করা সম্ভব নয়। দুর্নীতির কারণে সমাজের প্রশাসনিক এবং সরকারি গোষ্ঠী লাভবান হলেও এসএমই উদ্যোক্তারা বর্তমানে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। উদ্যোক্তাদের নতুন ব্যবসা শুরু থেকে তা পরে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া এবং ঘুস দেওয়া একটি স্বাভাবিক প্রথায় পরিণত হয়েছে।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আঞ্চলিক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির অভিজ্ঞতা এবং এ দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) সহায়তায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের এসএমই খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা এবং এসএমই খাতের প্রতিনিধিরা তাদের ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, ট্রেড লাইসেন্স তৈরি, প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, ভ্যাট দেওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হতে হয় এবং প্রতিটি দপ্তরে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়।

দুর্নীতির কারণে অনেক সময় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরাও এ দেশে বিনিয়োগ করতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে তারা মতামত প্রকাশ করেন।

আলোচনায় উপস্থিত একজন ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি এবং আমলাতন্ত্রের জটিলতার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো নানাভাবে হয়রানির শিকার করে বলে জানান তিনি।

একজন নারী উদ্যোক্তা উল্লেখ করেন, নারী হিসেবে তাদের অতিরিক্ত হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। যার কারণে বর্তমানে নতুন নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর অন্যতম কারণ হলো এক্ষেত্রে তাদের ট্রেড লাইসেন্সের দরকার হয় না বা কোনো ধরনের দুর্নীতির শিকার হতে হয় না। করোনা মহামারি সংকট নিরসনে সরকার দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের বণ্টন প্রক্রিয়ায়ও তারা দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেছেন। অনেক সময় সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এবং সরকারি কর্মকর্তারা অতিরিক্ত অর্থ জরিমানা করেন এবং ব্যবসায়ীদের এজন্য সমঝোতার আশ্রয় নিতে হয়, যা আসলে দুর্নীতিরই নামান্তর।

উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, এসএমই খাতে দুর্নীতির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি কর্মকর্তারা অনেকাংশে দায়ী। সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকার পরিবর্তে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী একজন উদ্যোক্তা বলেন, ভ্যাট দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ডিজিটালকরণ করা হলেও প্রশাসনিক দুর্নীতি এবং পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনার কারণে এর বাস্তব প্রয়োগ এখনো সম্ভব হয়নি। যা বিভিন্নভাবে দুর্নীতি চর্চার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দুর্নীতি প্রতিরোধে অকার্যকর ভূমিকা উল্লেখ করে তারা বলেন, সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে এবং সংগঠনগুলো সরকার সমর্থিত। তারা সরকার বা প্রশাসনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজই করবেন না।

আলোচনাসভায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে শাহেদুল ইসলাম হেলাল, আবদুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, শোয়েব চৌধুরী, হেলাল উদ্দীন এবং ‘সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান অংশ নেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেসিক ব্যাংকের পটুয়াখালী উপ-শাখার উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধসুবিধাবঞ্চিত ৩০ নারী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে এফবিসিসিআই