নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে আগের কার্যদিবস বড় উত্থান হলেও মঙ্গলবার সামান্য পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে)। তবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে সূচকের সাথে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমলেও সিএসইতে অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ডিএসই সূচক কমলেও টাকার পরিমাণে লেনদেন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড হয়েছে। ডিএসইতে দুই হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা ডিএসইতে এক বছর ১২ দিন বা ২৫৪ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৮৬৬ কোটি টাকার। ডিএসইর রেকর্ড লেনদেনের ফলে ১৫ বারের মতো ২৮শ কোটি টাকার অতিক্রম করেছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশের আর্থনীতি অবস্থায় বেশ ভালো সে জন্য শেয়ারবাজার ভালো হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হওয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেনের পালে হাওয়া লেগেছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেছেন, ডিএসইর লেনদেনে যে পরিমাণ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এতে করে বাজার আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আর বাজার এগিয়ে যাওয়ায় সব সময়ই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বড় ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা উল্লেখ যোগ্য। যা বাজারকে এগিয়ে যেতে আরও বেশি ভূমিকা পালন করছে।
গতকাল লেনদেনের শুরু হয় শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম। মূলত শেষ ৩০ মিনিটের লেনদেনে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমায় এ পতন হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতেই বড় লেনদেনের আভাস পাওয়া যায়। লেনদেন শুরুর মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে ডিএসইতে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। একই সঙ্গে উত্থান হয় সবকটি মূল্যসূচকের। শেষ পর্যন্ত লেনদেনের এ ধারা অব্যাহত থাকলেও সূচক উল্টো পথে হেঁটেছে। ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়ে যায়। ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪০ পয়েন্টের বেশি বেড়ে দিনের লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম সাড়ে ৩ ঘণ্টাজুড়ে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে সূচক। এতে দুপুর ১টায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ৭০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এখান থেকেই বদলে যেতে থাকে বাজারের চিত্র। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে হুড়মুড় করে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে সূচকের বড় উত্থান দেখতে দেখতে ঋণাত্মক হয়ে যায়। লেনদেনের শেষদিকে দেখা দেওয়া এমন ঝড়ে একদিকে যেমন সূচকের পতন হয়েছে, একই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান।
এতে দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির। আর ১৪৫টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪০১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৪২ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৩২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, অরিয়ন ফার্মা, বিএসসি, এ্যাকমী ল্যাবরেটরিজ, লাফার্জহোলসিম, জেএমআই হসপিটাল, ইস্টার্ন হাউজিং, শাহজিবাজার পাওয়ার, শাইনপুকুর সিরামিকস ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সেন্ট্রাল ফার্মা, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, বিডিকম অনলাইন, সী পার্ল বীচ, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, বসুন্ধরা পেপার, অরিয়ন ইনফিউশন, জেএমআই হসপিটাল ও আমরা ট্যাকনোলজি।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বিডি ওয়েল্ডিং, বিআইএফসি, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, ই-জেনারেশন, ইস্টার্ন ক্যাবলস, ন্যাশনাল টিউবস, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, জেনক্স ইনফোসিস, আরএসআরএম স্টীল ও পেপার প্রসেসিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৭টির এবং ১০৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।