ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর অবস্থানে রূপালী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণ খেলাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। নানা সমালোচনা ছিল ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতাদের নিয়ে। জনতা ব্যাংকের পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবার রূপালী ব্যাংক। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের পাঁচজন এবং রূপালী ব্যাংকের চারজন ঋণখেলাপিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনতা ব্যাংকের একই পথে হাটছে রূপালী ব্যাংকের খেলাপী গ্রাহকদের বেলায়। ব্যাংকটির টিসিবি ভবন কর্পোঃ শাখার দীর্ঘ দিনের খেলাপী গ্রাহক এন.ডি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা জামানকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে দিয়ে আলোচনায় আসে বিষয়টি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রূপালী ব্যাংকের টিসিবি ভবন কর্পোঃ শাখার গ্রাহক এন.ডি গ্রুপের কাছে ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী ছিল। ব্যাংকের শাখা থেকে ঋণ আদায়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৩৪(১) ধারা মোতাবেক ০৬(ছয়) মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ প্রদান, দায়িকের গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারায় অর্থজারী মামলা -৩০৬/২০২১) এর প্রেক্ষিতে গত ২৬.০৮.২০২২ তারিখে তুরাগ থানা পুলিশ এন.ডি গ্রুপের ঋণের জামিনদার মো. আলমগীর হোসেন, মাহবুব আলম ও এইচ এম শহীদুল আলম(মানিক) কে গ্রেফতার করে। সবশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানা পুলিশ মাহমুদা জামানকে তার নিজ বাসা ক্যান্টনম্যান্ট আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে আদালত এন.ডি গ্রুপের বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত রবিবার অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এছাড়া যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন আরও কয়েকজন খেলাপি। গ্রেফতার এড়াতে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, আছেন আত্মগোপনেও। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যেকোন মূল্যে ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমান কমিয়ে আনা হবে এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নীতি অব্যাহত থাকবে।
ঋণের নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, এন.ডি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা জামান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহাদুজ্জামান মূলত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। মেয়াদী ঋণ, সিসি(হা), এলটিআর, ফোর্সড লোন ও কার লোন বাবদ গ্রুপটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ১. এন.ডি প্রিন্টিং এন্ড এমব্রয়ডারি লিঃ ২. এন.ডি এ্যাপারেলস লি. ৩. এন.ডি নিট কম্পোজিট লিঃ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহাদুজ্জামান (কার লোন) এবং পরিচালক মাছুমুজ্জামান(কার লোন) এদের নামে মোট ঋণ হিসাব সংখ্যা ১০টি । ঋণের দুই দফা পুনঃতফশিল করা হয় ১ম ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২ এবং দ্বিতীয় দফা ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে। খেলাপীর তারিখে মোট মূল ঋণ ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বর্তমান স্থিতির পরিমান ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ যে সমস্ত গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে রূপালী ব্যাংক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুঁজিবাজারে সূচকের সঙ্গে কমেছে লেনদেন
পরবর্তী নিবন্ধপণ্য খালাসে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয় সমুদ্রবন্দরে