নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশান, বনানী সহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকাগুলোর বড় বড় শোরুমে আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা ছাড়া গুঁড়া দুধসহ বিভিন্ন কসমেটিকস পণ্য ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের সময় পাওয়া যাচ্ছে। এই পণ্যগুলো এত বেশি পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে যা লাগেজে আসা সম্ভব না, কাস্টমস ফাঁকি দিয়েও আসা সম্ভব না। এগুলোর বেশিরভাগই নকল।
রোববার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) আয়োজিত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী সেবা প্রদান বিষয়ক গণশুনানিতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, এই পণ্যগুলোতে আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা ও এমআরপি কিছুই থাকে না। আমরা অভিযানে সম্প্রতি এ ধরনের নকল পণ্য তৈরির কিছু কারখানাও পেয়েছি। অনেক অভিযোগ আসছে এসব নিয়ে, ভোক্তাদেরও উচিত এ ধরনের পণ্য ব্যবহার না করা। আবার আমদানিকারকের নাম-ঠিকানা ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রিও করা যাবে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই আমরা তা আমলে নেই। তিতাস গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় নোটিশ করা হয়েছে। কারণ ৩৩০ টাকার গ্যাস ১০৮৫ টাকা করা হয়েছে। তারপরও পাওয়া যায় না। এটা হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ভোক্তা অধিকার আইনে তিন ধরনের ব্যবস্থা আছে। বাজার অভিযানে জরিমানার সঙ্গে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলাও করার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মহাপরিচালকের অনুমোদন লাগবে। তাই হয়তো করা হয় না। কিন্তু বড় বড় অপরাধে ফৌজদারি মামলা করতে হবে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর কোন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে না। তারা নকল ও ভেজাল দেওয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। একদিকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, আবার জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ শুধু অভিযান করে সব করা যাবে না। দেশে খাদ্যের মান দেখার জন্য বিএসটিআই আছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আছে। তারা সঠিকভাবে কাজ করলে ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজ অনেকটা কমে যাবে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, নিজ নিজ জায়গায় সবাই কাজ করলে ভোক্তা আইন এক সময় লাগবে না। কিন্তু বড় বড় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন লাগবে। কারণ দেশের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা থাকবে না। বড় বড় প্রতিষ্ঠান থাকবে। তাই তাদের অসম প্রতিযোগিতায় দেখার জন্য প্রতিযোগিতা কমিশন থাকতে হবে। চাল, আটা ময়দা ও ডিটারজেন্টে বেশি দাম নেওয়ার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এখন প্রতিযোগিতা কমিশনে আসতে হচ্ছে। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হচ্ছে। কারণ, আইন অমান্য করলে জরিমানা পেতেই হবে, যোগ করেন তিনি। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম বলেন, ব্যবসায়ীরাও ভোক্তা। তাই আমরা সবাই এক পক্ষ। তবে কেউ দুষ্কৃতকারী থাকলে আমরা তার পক্ষে নয়। এটা দেখার বিষয়।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেজালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও আমরা ভেজাল দিচ্ছি। খোলা তেলে ভেজাল দিয়ে বেশি দাম নিচ্ছি। এ থেকে মুক্তি চাই। পৃথিবীতে কোথাও খোলা তেল নেই। তাই আমাদেরও খোলা তেল বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। অন্যের পণ্য এনে ব্যবসা করা যাবে না। ২৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে গিয়ে ভোক্তা আইনের যাতে অপব্যবহার না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।