নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। তবে এ পণ্যের কাঁচামাল ছিল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। এতে উৎপাদন কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হতো। এবার ভাঙছে সেই অচলায়তন। এখন থেকে দেশেই তৈরি হবে প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল। প্লাস্টিকপণ্যের এ কাঁচামাল দেশেই তৈরি করতে বড় বিনিয়োগ করছে বৃহৎ শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্ল্যান্ট বসেছে, উৎপাদনও শুরু হয়েছে। উৎপাদিত রেজিন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি শুরু হয়েছে। এ কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বড় অংকের ঋণসুবিধা দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের আইএনজি ব্যাংক।
মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, প্লাস্টিকপণ্যের কাঁচামালের চাহিদা বাড়ছেই। এজন্য এ শিল্পে বিনিয়োগ করেছি। নতুন কারখানায় বছরে যে পরিমাণ কাঁচামাল তৈরি হবে, তাতে দেশীয় চাহিদার অর্ধেকের বেশি মেটানো সম্ভব হবে।
বছরে ৭৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি :
গ্রুপটির কারখানা থেকে প্লাস্টিকের মূল কাঁচামাল পিভিসি ও পেট রেজিন উৎপাদন হবে, যা আগে ছিল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্লাস্টিকপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তিন লাখ ২৬ হাজার টন পিভিসি আমদানি করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪৭ কোটি ডলার। আর পেট রেজিন আমদানি হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার টন। এতে ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ডলার।
মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম (ফাইন্যান্স) আফজাল হোসেন বলেন, এটা আসলে শতভাগ আমদানিনির্ভর পণ্য উৎপাদন করবে। কারখানায় আমরা পিভিসি ও পেট রেজন উৎপাদন করবো। এ দুটি আইটেম আমরা সম্পূর্ণ আমদানি করছি। কোনো ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট আগে ছিল না। এগুলো আগে আমাদের চীন থেকে আমদানি করতে হতো। আমাদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনের ফলে এখন প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
তিনি বলেন, পিভিসি রেজিনের বার্ষিক চাহিদা চার লাখ টনের বেশি। যেখানে আমাদের ক্যাপাসিটি দেড় লাখ টন। আমরা ৪০ শতাংশের মতো চাহিদাপূরণ করতে পারবো। এ রেজিন দিয়ে পিভিসি পাইপ, ফার্নিচার, প্লাস্টিক শিট- এ ধরনের পণ্য তৈরি করা যাবে। পেট রেজিনের ক্ষেত্রে বলা যায়, ৯০ শতাংশ চাহিদা আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো।
শুরু হয়েছে রপ্তানিও
২০১৭ সালে প্লাস্টিকপণ্য উৎপাদনের জন্য যে কাঁচামাল লাগে, তা তৈরিতে কারখানার নির্মাণকাজ শুরু হয়। মহামারি করোনাভাইরাসে কারণে কারখানা স্থাপনের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে চলতি বছর থেকে কারখানাটি উৎপাদনে আসে। এ কারখানায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র এজিএম আফজাল হোসেন বলেন, মেঘনা ইকোনমিক জোনে কারখানাটা করেছি আমরা। সেখানে প্রায় ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্ল্যান্ট বসেছে, উৎপাদনও শুরু হয়েছে। ভারত ও নেপালে দুইমাস ধরে পেট রেজিন রপ্তানি করছি। চলতি মাস থেকে পিভিসি রেজিন রপ্তানিও শুরু করেছি, রেসপন্সও বেশ ভালো।
তিনি বলেন, ‘এটা যেহেতু দেশে প্রথম, ফলে টেকনলজিক্যালি আমরা আরও এগিয়ে যাবে। কেমি ইঞ্জিনিয়ার যারা আছেন, তাদের প্র্যাকটিসের একটা সুযোগ হবে।’
উদ্যোক্তারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০৩০ সালে ১০ বিলিয়ন টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন। সেক্ষেত্রে মেঘনা গ্রুপের এ কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।