নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি মিলছে না

মাসুদ মিয়া: নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি মিলছে না প্রতিনিয়ত অকল্পনীয়ভাবে বেড়েই চলেছে। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মোটা চাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম। অন্যদিকে শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। কমেনি ডিম এবং ব্রয়লার মুরগির দামও। ফলে বাজারে নেই কোনো স্বস্তির খবর। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। চালের দোকান ঘুরে জানা যায়, মোটা চালের মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এক সপ্তাহ আগেও খুচরায় যে চালের দাম ছিল ৫২-৫৪ টাকার মধ্যে, সেই চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ দোকানে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল নেই। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা পাইজাম, যা প্রতিকেজি ৫৬-৫৮ টাকা। লক্ষিবাজারের চাল বিক্রেতা হাচান আলী বলেন, মৌসুম শেষ বলে কমদামের স্বর্ণা চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যে দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পাইজাম এখন মোটা চাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইজামের দাম স্বর্ণা থেকে প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা বেশি।

এদিকে, বাজারে নতুন করে বেড়েছে চিনির দাম। এক কেজি খোলা চিনি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ৯০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর প্যাকেটজাত চিনি কিনতে গুনতে হচ্ছে কোম্পানিভেদে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা।
যদিও সরকার নির্ধারিত চিনির দাম এর থেকে অনেক কম। সরকার নির্ধারিত সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৮৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু রিফাইনার্সরা চলতি মাসের শুরুতেই প্রতিকেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ট্যারিফ কমিশনে। বাস্তবে সেটাও মানা হচ্ছে না, বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে।
পাঁচভাই ঘাটলেন ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, কোম্পানিগুলো চিনির দাম বাড়াবে হয়তো, সেজন্য সরবরাহ একবারে কমিয়ে দিয়েছে। পাইকারি বাজারে চাহিদা দিলেও আগের দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অনেকে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ৪৫-৫৫ টাকা ছিল। এখন বাছাই করা এক কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা।
এদিকে শীতের সবজি তেমন সমাহার দেখা যায়নি। দামও রয়েছে যথেষ্ট চড়া।
কিন্তু সব কিছুর মূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে পেঁপের দামে। গত সপ্তাহে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে শিমের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায় গত সপ্তাহ ছিল ১২০ টাকা।
খুচরা বাজারগুলোতে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা করে, শসা ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, ধনিয়াপাতা ২০০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা ও কাঁকরোল ৬০ টাকা করে করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা ও ফুলকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টার ওপরে কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে সবজির বাজার চড়া দীর্ঘ দিন ধরে থাকায় অনেক পরিবার কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তবে ক্রেতারা আশা করছে আসন্ন শীতের সময় হয়তো দাম কিছুটা কমতে পারে। রায়সাহেব কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা অনুপ হাওলাদার বলেন, এক পেঁপে ছাড়া বাজারে সব সবজির দাম আগের মতো বাড়তি। এছাড়া সব পণ্যের দামই এখন বাড়তি। এ অবস্থায় আমাদের সংসার চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সবজির দামের বিষয়ে কলতাবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনা শিমের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। সামনে আরও কমবে।
কাঁচা মরিচের পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০ টাকায় উঠেছিল। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনানি মুরগির দাম। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সোনানি মুরগির কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হয়।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।
মিরপুর পিরেরবাগ বাজার থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে হলো ফিরোজ নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলনে, বাজারে এমন কোনো জিনিস নেই যে জিনিসের বাড়তি দাম যাচ্ছে না। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষ যে কিভাবে এই বাজারে টিকে আছে সে কথা শুধু আমরাই জানি। মাছ, মাংস, ডিম সব কছিুরই দাম বাড়তি। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এর মধ্যে হঠাৎ দাম বড়েছে পেঁয়াজরেও। ৪০ টাকায় কেজি যে পেঁয়াজ কিনেছি সেই পেঁয়াজ এখন ৬০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যরে উর্ধ্বগতিতে আর টিকে থাকতে পারছি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোজ্য তেলের দাম কেন কমছে না খতিয়ে দেখা হচ্ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধওয়ালটনের বিশ্বমানের এসি প্রদর্শিত হচ্ছে সেইফকন আন্তর্জাতিক এক্সপোতে