বাংলাদেশ ব্যাংকের পর বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকরি উচিত নয়: বিদায়ী মুখপাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে চাকরি করা ‘উচিত নয়’ বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদায়ী মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে যাওয়ার আগে মঙ্গলবার নিজের শেষ কর্মদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং এর ‘সুফল’ জানাতে তিনি এদিন সাংবাদিকদের সামনে আসেন।

সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় কাজ করে কয়েকটি বিষয়ে যে দক্ষতা সিরাজুল ইসলাম অর্জন করেছেন, তা তিনি বেসরকারি খাতের কোনো চাকরিতে ব্যবহারের ইচ্ছে রাখেন কি না।

উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেখান থেকে চাকরি করে অবসরে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপদেষ্টা হওয়াসহ যে কোনো পদবি বা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা উচিত নয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক বা নির্বাহী পরিচালক পদ থেকে অবসরে যাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গত কয়েক বছরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। কেউ হয়েছেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেউবা উপদেষ্টা কিংবা ব্যাংকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান।

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় কাজ করে পরে অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি সুবিধা নেওয়ার ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বিষয়টি নৈতিকভাবে সমর্থন করেন না আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞরা। এতে অবসরে যাওয়ার আগে ওইসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নীতি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেইসব কর্মকর্তাদের।

বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার চলমান এ সংকট বৈশ্বিক। পুরো বিশ্বই চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর ওপর বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ছেড়ে দিয়েছে। এখন তারাই দর নির্ধারণ করছে।

আমদানি চাপে সংকট দেখা দেওয়ায় ডলারের দর এক বছরের ব্যবধানে ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১১ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। বর্তমানে তা ৯৯ থেকে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।

নানা কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠা ডলারের সংকট সামাল দিতে প্রতিনিয়ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৮ থেকে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। তাতে বাংলাদেশে কোনো নতুন সংকট তৈরি হবে কি না- এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে তিনি বলেন, “ডলার বিক্রিতে রিজার্ভ কমেছে, এটা সত্য। এটা বাড়বে-কমবে স্বাভাবিক। আবার এক জায়গায় যে রিজার্ভ স্থির রাখতে হবে- এমন তো নয়।

“সব খাতেই একটি ভারসাম্যা রাখতে হবে। রিজার্ভ এক সময় ৪৮ বিলিয়ন হয়েছিল। সেখান থেকে আবার কমেছে। এটা বুঝতে হবে যে, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রাখা হচ্ছে কি-না। বাংলাদেশ ব্যাংক ভারসাম্য রাখছে।”

ডলার সাশ্রয়ে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের বিষয়ে এক প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থনীতির প্রয়োজনেই’ এটা করা হয়েছে। তবে এটাও স্থায়ী সমাধান নয়। এখন রপ্তানি, রেমিটেন্স বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিডল্যান্ড ব্যাংক ও পপুলার মেডিকেলের সমঝোতা স্বাক্ষর
পরবর্তী নিবন্ধ৩১ ডিসেম্বরের পর সয়াবিন বলে পাম অয়েল বিক্রি নয়: বাণিজ্যসচিব