নিউজ ডেস্ক : গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজার মন্দার মধ্য দিয়ে পার করলেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার পছন্দের শীর্ষে উঠে আসে। এতে সপ্তাহজুড়েই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার।
অবশ্য শুধু গত সপ্তাহ নয়, প্রায় তিন মাস ধরে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ছে। এতে তিন মাসেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়লেও ডিএসই থেকে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়নি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৮ জুলাই বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপারের শেয়ার দাম ছিল ১৪০ টাকা। এরপর দাম বাড়তে বাড়তে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৯২ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠে। কোম্পানিটি চলতি বছরের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এই লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ার দাম বাড়ার পালে আরও হওয়া লেগেছে। এরই মধ্যে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩৬০ টাকা ৮০ পয়সায় উঠেছে।
এর মধ্যে গত সপ্তাহেই দাম বেড়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৯৩ টাকা ৬০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৬০ টাকা ৮০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ২৬৭ টাকা ২০ পয়সা।
এ বিষয়ে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপারের শেয়ার দাম যেভাবে বাড়ছে তা স্বাভাবিক নয়। কোনো বিশেষ চক্র পরিকল্পিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াতে পারে। কারণ বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপারের থেকেও বড় লভ্যাংশ ঘোষণা করা অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একশ টাকার নিচে রয়েছে। সেখানে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা একটি কোম্পানির শেয়ার দাম প্রায় চারশ টাকা স্বাভাবিক হতে পারে না।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি ৯ শতাংশ নগদ ও ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়।
মাত্র ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৯৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮২৫টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এদিকে শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কে লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার দাম বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২৬ দশমিক ২২ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নাভানা সিএনজির ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ, আফতাব অটোমোবাইলসের ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের ১৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, মুন্নু সিরামিকের ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।