নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের খরা কাটছে না। যতোদিন যাচ্ছে ততই লেনদেন তলানিতে যাচ্ছে। গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে শেয়ারবাজার। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৩ কোটি টাকা। এরআগে চলতি বছর ১৯ জুলাই লেনদেন হয়েছিল ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার টাকা। তবে লেনদেন কমলেও গতকাল সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখি রেখেই শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচক কিছুটা বেড়েছে। তবে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমেছে। যদিও ডিএসইতে সূচক বাড়লেও লেনদেনে খরা দেখা দিয়েছে। মূল্যসূচকে মিশ্র প্রবণতা দেখা দিলেও দুই বাজারেই দাম কমার তুলনায় দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারী ক্রেতার অভাবে তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। এর আগে সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। তবে তৃতীয় কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। অবশ্য চতুর্থ কার্যদিবসে আবার দরপতন হয়। সূচকের উত্থান-পতনের মধ্যে অব্যাহত থাকে লেনদেন খরা।
গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতে মূল্যসূচকের ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা যায়। লেনদেনের আধাঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৫ পয়েন্ট কমে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই নিম্নমুখী প্রবণতা প্রথম সাড়ে তিন ঘণ্টা অব্যাহত থাকে।
তবে শেষ আধাঘণ্টার লেনদেনে দরপতন থেকে বেরিয়ে আসে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এতে মূল্যসূচকও ঋণাত্মক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে। ফলে সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন। অবশ্য লেনদেন খরা অব্যাহতই থাকে। ফলে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৪৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮টির। আর ২২৬টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৪০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেনি, চলতি বছরের ১৯ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। ১৯ জুলাই ডিএসইতে ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
লেনদেন খরার দিনে বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা ইসলামী লাইফ, এডভেন্ট ফার্মা, নাভানা ফার্মা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে দশমিক ৯৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২টির এবং ৭০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।